দোয়ারাবাজারে ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রিতে অনিয়ম

মো. হাবিবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


জুন ০৬, ২০২০
১২:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২০
১২:৫৬ পূর্বাহ্ন



দোয়ারাবাজারে ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রিতে অনিয়ম

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ১০ টাকা কেজি দরে ন্যায্যমূল্যের কার্ডের চাল বিক্রিতে চলছে চরম অরাজকতা। এবার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রি নিয়ে রীতিমতো 'গায়েবি কাণ্ডের' খবর উঠে এসেছে। তালিকায় নাম থাকলেও চার বছর ধরে অন্তত ৫০ জন কার্ডধারী ন্যায্যমূল্যের চাল পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্রদের তালিকায় নাম থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তাদের চাল হাতিয়ে নিচ্ছে অদৃশ্য অন্য কেউ।

তালিকায় নাম থাকার পরও চাল না পেয়ে অর্ধশতাধিক বঞ্চিত মানুষ সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে জড়ো হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ধন মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। তাদের সংশ্লিষ্ট ডিলারের সঙ্গে হট্টগোল করতেও দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনিয়ম হয়েছে খোদ স্থানীয় ইউপি সদস্যদের যোগসাজসে হতদরিদ্রদের নামের তালিকা প্রনয়ণেও। অনেক কার্ড রয়েছে ভুয়া। আবার তালিকায় এমন কারও নাম রয়েছে যা তিনি নিজেও জানেন না। নির্দেশনা রয়েছে ডিলারের দোকানে কার্ডধারীর নামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হবে। কিন্তু ডিলারের দোকানে এটি দৃশ্যমান পাওয়া যায় না। আর ডিলাররা অধিকাংশই ব্যবসায়ী নন। সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব চাল নিয়ে করছেন অরাজকতা। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাকিলায় একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে। নাম রয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজন ও বিত্তশালী শত শত মানুষের নামও।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, উপজেলার ১ নম্বর বাংলাবাজার ইউনিয়নের কলোনী গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের নাম রয়েছে হতদরিদ্র তালিকায়, যার ক্রমিক নম্বর ৪৬৯। এ দরিদ্র মানুষটি বিগত দিনে ১০ টাকা মূল্যের ৩০ কেজির কোনো চাল পাননি। এমনকি বর্তমানে তার কার্ড পর্যন্ত নেই। কবে চাল পেয়েছেন তা তার মনেও নেই। অথচ তাদের নামের চাল তুলে নিয়ে ডিলার তা বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।

একই দশা ওই ইউনিয়নের তালিকার ৪৭৪, ৪৮৯, ৪৯৫, ৪৯৭, ৫০১, ৫০৪, ৫১২, ৫১৭, ৫২১, ৫৪৯, ৫৫১, ৫৫২, ৫৫৩, ৫৫৪, ৫৫৬, ৫৫৮, ৫৬০, ৫৬১, ৫৬৪, ৫৭৫, ৫৮০, ৫৯৬, ৫৯৭, ৬০৫, ৭২৮, ৭৪৩, ৭৪৭, ৭৭৪, ৭৭৭ ও ৭৭৯ নম্বর ব্যক্তিদের। তারা ২০১৬ সাল থেকে আজ অবধি কোনো সুবিধা ভোগ করেননি। বিগত দিনে এসব তালিকার নামীয় ব্যক্তিদের চাল উত্তোলন করা হলেও চাল পাননি সংশ্লিষ্ট কার্ডধারীরা। তাদের নিজেরও জানা নেই যে তাদের নামে ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন করা হয়।

হতদরিদ্র তালিকাভুক্ত একাধিক ন্যায্যমূল্যের চাল বঞ্চিতরা বলেছেন, তাদের নাম তালিকায় আছে, অথচ তারা কোনোদিনই এই সুবিধা পাননি। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ডিলার পরিবর্তন হয়েছে। এই সময়ে এসব নামে চালও উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতরা ন্যায্যমূল্যের চাল পাননি। এ নিয়ে কিছুদিন পূর্বে কথা ওঠায় কয়েকজন বঞ্চিত ব্যক্তিকে কার্ড প্রদান করা হলেও বেশিরভাগ হতদরিদ্রদের চাল গায়েব করা হয়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নেও একই দশা। তালিকা প্রকাশ্যে টানিয়ে দিলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সচেতন মহলের দাবি। মোটকথা, সরকারের গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো দুর্নীতিবাজ একটি সিন্ডিকেটের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে। মানুষ যেমন সুবিধা পায় না, তেমনি সরকারের ঘরেও সুফল পৌঁছায় না।

ন্যায্যমূল্যের চালের বর্তমান ডিলারদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, এ বিষয়ে তাদের কিছুই জানা নেই। তারা নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর এখনও চাল বণ্টন শুরু করেননি। অনিয়ম হয়ে থাকলে পূর্বের ডিলারগণ তা ভালো জানেন।

দোয়ারাবাজার উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা সেলিম হায়দার জানান, বাংলাবাজার ইউনিয়নে অনিয়মের কারণে গতমাসে দুইজনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। এ রকম অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এইচএইচ/আরআর-০৪