স্বপ্নপূরণে সহায়তা চায় মেধাবী দুই বোন

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


জুন ০৬, ২০২০
০৩:০৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২০
০৩:০৮ পূর্বাহ্ন



স্বপ্নপূরণে সহায়তা চায় মেধাবী দুই বোন

ঝর্ণা ও ফাহিমা

অদম্য মেধাবী ঝর্ণা ও ফাহিমা দুই বোন। এবার এক সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে দু’জনই। দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে ঝর্ণা এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছে। বাবা-মাসহ শিক্ষকমন্ডলীর মুখ উজ্জ্বল করেছে ওই দুই বোন। পড়াশোনার খরচ ভালোমতো না জুটলেও এ দুই অদম্য মেধাবীর সাফল্যে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি।

দুই বোনই স্বপ্ন দেখছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের মতো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু দারিদ্রতাই এখন তাদের স্বপ্নপূরণে মূল বাধা বলে মনে করছে মেধাবী দুই বোন। কেবল লেখাপড়ার খরচ যোগান দেওয়াই নয়, তাদের অভাবী পরিবারের একমাত্র রোজগারী বাবাও অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের জন্য খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকাটাই এখন দায়। এ অবস্থায় সমাজের হৃদয়বান মানুষের একটু সহযোগিতা পেলে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার অদম্য মেধাবী এই দুই বোনের ভবিষ্যতের স্বপ্নপূরণের পথ অনেকটাই সুগম হবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের কামারপট্টি এলাকার বাসিন্দা রমজান আলীর (৬৫) দুই মেয়ে ঝর্ণা বেগম ও ফাহিমা বেগম। এবার দোয়ারাবাজার মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এক সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। বড় মেয়ে ঝর্ণা বেগম ওই প্রতিষ্ঠান থেকে একমাত্র গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং অপর মেয়ে ফাহিমা বেগম জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছে। উপজেলা সদরের ওই বিদ্যালয় থেকে এবার ১৩৪ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে তারা দুই বোনই সেরা ফলাফল অর্জন করেছে। তারা দারিদ্রতাকে জয় করে প্রতিষ্ঠানের জন্যও সুনাম কুড়িয়েছে। এতে খুশি শিক্ষকরাও। কিন্তু পরিবারের দারিদ্রতার কারণে তাদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে তাদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, দিনমজুর রমজান আলী একজন খেটে খাওয়া মানুষ। শ্রমিকের কাজ করেই চলে তাঁর সংসার। কখনও খাদ্যগুদামে, কখনও কারও দোকানে, আবার কখনও বা দিনমজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। তিনি এখন বয়সের ভারে ক্লান্ত। বড় পরিবারের একমাত্র রোজগারী কর্তাব্যক্তিও তিনিই। কুড়ি বছর আগে সুরমার ভাঙনে বিলীন হয় তাঁর সম্বল ভিটেমাটি। সহায়-সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই এখন। অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে যৌবনকালে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের বাসা-বাড়িতে থেকেছেন। সময়ের বিবর্তনে কোথাও ভিটেমাটি করতে না পারায় কয়েকবছর হলো তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের কামারপট্টি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় সপরিবারে বসবাস করছেন। তাঁর পরিবার সেই কবে থেকে ‘নুন আন্তে পান্তা ফুরানোর অবস্থা’। তবুও থেমে নেই তাঁর অদম্য ইচ্ছা। স্বামী-স্ত্রী দু'জনই দিনমজুরী করে এবং অন্যদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে লেখাপড়া করাচ্ছেন সন্তানদের।

মেধাবী ঝর্ণা ও ফাহিমা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে, আমাদের বাবা-মায়ের প্রচেষ্টা ও নিজেদের অদম্য ইচ্ছার কারণেই ভালো ফলাফল অর্জন করেছি। তারা খেয়ে না খেয়ে আমাদের পড়াশোনা করিয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবার এখন অনেক বয়স হয়েছে। পড়ালেখার খরচ যোগান দেওয়া তো দূরের কথা, তিনবেলা খাওয়ানোটাই কঠিন হবে। আমরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই এবং সমাজের অন্যদের মতোই বাঁচতে চাই।

দরিদ্র রমজান আলী আকুতি জানিয়ে বলেন, আমি বড় হতভাগা। আমার পৈতৃক ভিটা ছিল উপজেলা সদরের মুরাদপুর গ্রামে। ১৯৯৯ সালে সুরমা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় বসতভিটা। সেই থেকে গ্রামে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন লোকজনের বাড়িতে থেকেই দিন পার করেছি। ছেলে-মেয়েরা বড় হতে থাকলে তাদের লেখপড়ার কথা চিন্তা করেই কামারপট্টি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকছি। দিনমজুরী করেই চলে আমার সংসার। যখন যে কাজ পাই তা-ই করি। কখনও কখনও মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দেই।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবকালীন সময়ে একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছি। অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে কোনোরকমে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বেঁচে আছি। দুইমাস গত হলো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারায় বাসার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে কর্মহীন হয়ে বাসা ভাড়া দিতে না পারায় দ্রুত ভাড়া পরিশোধ করতে প্রতিনিয়ত তাগিদ দিচ্ছেন বাসার মালিক। তবুও এক সঙ্গে আমার দুই মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করায় এতদিনের কষ্ট এখন ভুলে গেছি। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা বা তাদের স্বপ্নপূরণে আমি অক্ষম। আমি সমাজের দানশীল বিত্তবানদের কাছে সহায়তা কামনা করছি।

 

এইচএইচ/আরআর-১৪