জিপিএ-৫ পেয়েও চিন্তিত অদম্য মেধাবী আল-আমীন

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জুন ০৭, ২০২০
১০:৫১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৭, ২০২০
১০:৫১ অপরাহ্ন



জিপিএ-৫ পেয়েও চিন্তিত অদম্য মেধাবী আল-আমীন

মো. আল-আমীন সিদ্দীক। অদম্য মেধাবীদের একজন সে। চেহারায় এখনও কৈশোরের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল দ্যুতি ঝলমল করছে। চোখে মুখে সাফল্যের চূড়া ছোঁয়ার অব্যক্ত  স্বপ্নময় ভাষা। অন্তরে সুপ্ত স্বপ্নগুলো অঙ্কুরিত হওয়ার বাসনায় চটফট করলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অস্বচ্ছলতা। সামর্থহীন পিতার টিনসেডের ছোট্ট ভাড়াটে ঘরে আল-আমীন যেন মঙ্গল প্রদীপ হয়ে জ্বলা আশান্বিত কোন আলোকরশ্মি। তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠিন অধ্যবসায়ই তার সফলতা। তবু অভাবের কারণে নিজেকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আল-আমীন।

জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কামলাবাজ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থী আল-আমীন ও তার পিতা ইস্কন্দর আলীর সঙ্গে। তাদের সাজানো-গোছানো ছিমছাম ছোট্ট ঘরটি দেখলে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে নিত্য খেলা করে অভাব-অনটন আর দুঃখ-কষ্ট। পরিপাটি এই অভাবী পরিবারের ঘানি টেনে চলেছেন ফলাফলে তাক লাগানো আল-আমীনের গরীব পিতা ইস্কন্দর আলী। অস্বচ্ছল পরিবারের নানা বাধ্য-বাধকতা উপেক্ষা করে ছেলে যে ফল এনে দিয়েছে তাতে তিনি তৃপ্ত। তবে দারিদ্র্যতার কারণে ছেলেকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে না পারার কষ্ট বেশ পীড়া দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে মো. আল-আমীন সিদ্দীক। জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কামলাবাজ গ্রামের মো. ইস্কন্দর আলী ও মোছা. সমতারা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের কনিষ্ঠতম সে। তার একমাত্র বোন ডিগ্রি পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায়। অপর ভাই ওয়ার্কশপে মিস্ত্রির কাজ করেন। এখানে তাদের নিজের কোন বাড়ি নেই। জীবিকার সন্ধানে প্রায় পনেরো বছর আগে রংপুরের সদর উপজেলা ছেড়ে জামালগঞ্জে বসতি স্থাপন করে আল-আমীনের পরিবার। সেখানে পিতা ইস্কন্দর আলীর একটি ছোটখাটো গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে রিকশা ও বাইসাইকেল মেরামত করে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার।

সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তিচ্ছুক আল-আমিন জানিয়েছেন, পড়ালেখার প্রতি তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও নিবিড় মনোযোগই ভালো ফলাফল অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছে। অভাবের কারণে প্রাইভেট পড়ার তেমন সুযোগ ছিল না। শুধুমাত্র স্কুলে অধ্যয়নের মাধ্যমে ভালো ফল প্রাপ্তি সম্ভব হয়েছে তার। পড়ালেখা করে সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করতে চায় সে। পরিবারের অভাব-অনটন দূর করে অস্বচ্ছল পিতামাতার মুখে হাসি ফুটানোই তার মূল লক্ষ।

ছেলের গর্বিত ফলাফলে চিন্তিত ইস্কন্দর আলী বলেন, ‘আমার ছেলেডারে বড় অফিসার বানাইতে চাই। এর জন্য ভালো কলেজে ভর্তি করানো দরকার। কিন্তু আমার যে সেই সামর্থ নাই। ভালো ফলাফল করার পরও তারে পছন্দের কলেজে ভর্তি করানো সম্ভব হইত না। রিকশা-সাইকেল ঠিক কইরা যে আয় তা দিয়া বাড়ি ভাড়া ও পরিবার চালাইতে খুব কষ্ট হয়। শহরে পড়ালেখার খরচ কি কইরা চালাইমু। কেউর সহযোগিতা পাইলে আমার ছেলেডা হয়তো বড় কিছু হইতে পারত।’

অদম্য মেধাবী আল-আমীন সিদ্দীক কারও যোগ্য সহযোগিতা পেলে হয়তো তার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। অভাবী পরিবারে বসবাস করেও শুধুমাত্র মেধার জোরে যে ফলাফল অর্জন করেছে আল-আমীন তাতে ভালো কিছু করা অসম্ভব নয়। কারও সাহায্য পেলে মেধাবী আল-আমীন দেশের সম্পদ হয়ে উঠবে, সেটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে এর জন্য প্রয়োজন সহযোগিতা। আল-আমীন ও তার পিতা সে আহবানই জানিয়েছেন।

বিআর/বিএ-০৬