জামালগঞ্জে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় লঙ্ঘিত স্বাস্থ্যবিধি

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জুন ১০, ২০২০
০১:২৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১০, ২০২০
০১:২৭ পূর্বাহ্ন



জামালগঞ্জে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় লঙ্ঘিত স্বাস্থ্যবিধি
বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে করোনাকালীন সামাজিক দূরত্ব। করোনার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাট-বাজারে জড়ো হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। কোনোরকম বাধা-নিষেধ ছাড়াই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বিচরণ করছেন তারা। এ উপজেলায় এক এক করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও প্রশাসন অনেকটা নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। তাদের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এ নিয়ে এলাকার সচেতন মানুষেরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

জানা যায়, গত শনিবার (৬ জুন) এ উপজেলায় সন্দেহবশত ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে ৫ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। গতকাল সোমবার (৮ জুন) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এক সঙ্গে ৫ জন করোনা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে উপজেলায় আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ১৩ জনের দেহে করোনার উপস্থিতির কথা নিশ্চিত করেছে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষাগার। এর মধ্যে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৮ জন আইসোলেশনে আছেন। এভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও হাত-পা গুটিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলার সাচনা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো প্রবণতা নেই। একেবারে গা ঘেঁষে বাধাহীনভাবে বাজারে চলাচল করছেন মানুষ। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। সর্বত্রই লঙ্ঘন হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নিয়ম-নীতি। এতে কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আছে বলে মনে হয় না।

নিজেকে নিরাপদ রাখতে মাস্ক ব্যবহার করছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বললেন, 'মাস্ক-টাস্ক লাগে না, করোনা ধরলে ধরব!' করোনার বিপর্যয়কালীন মুহূর্তে মানুষের এই বেপরোয়া চলাচল নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। এতে জামালগঞ্জে চরম বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে স্থানীয় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ডা. বিষ্ণুপদ সূত্রধর বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনেছি। এতে মানুষ কিছুটা আতঙ্কিত ঠিক, তবে সচেতন নয়। কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি মেনে চলছে না তারা। এ জন্য প্রশাসনিক কোনো তৎপরতাও চোখে পড়ছে না। যদি প্রশাসন এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে আক্রান্তের দিক থেকে জামালগঞ্জের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়বে।

জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষণ চক্রবর্ত্তী বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষায় প্রথমত আমাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। তবে হাট-বাজারে চলাচলরত মানুষের মধ্যে এর প্রচণ্ড ঘাটতি আছে। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্তমান শিথিলতা পরিহার করে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি।

জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম জিলানী আফিন্দী রাজু বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ একেবারে অসচেতন। তাদেরকে বলেও সচেতন করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই তারা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছে। করোনা মোকাবেলায় মানুষকে সচেতন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে হয়তো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

জামালগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল বিন বারী বলেন, আসলে মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। এখানে শতকরা ৫ ভাগ মানুষও মাস্ক পড়ে না। এখন মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো কঠোরতা নেই। যার কারণে লোকজন করোনার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে চাইছে না। প্রশাসন কঠোর না হলে মানুষ সচেতন হবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে। আর এতে ব্যক্তিগত সচেতনতাই বড় কথা। যদি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে, তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সুযোগ আছে। অতি শিগগির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

বিআর/আরআর-০৩