‘মৃত্যুর মিছিল’ থামবে কবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ১১, ২০২০
০৬:০৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১১, ২০২০
০৭:২৫ অপরাহ্ন



‘মৃত্যুর মিছিল’ থামবে কবে?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট বিভাগে ৩৮ জন মারা গেছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা-আক্রান্তদের সংখ্যা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বেশ কয়েকজন রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া কবে নাগাদ এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে, তাও বলতে পারছেন না চিকিৎসক থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তাই শেষ পর্যন্ত এ মৃত্যুর মিছিল কোথায় গিয়ে থামবে, এ নিয়ে এখন চিন্তিত সিলেটের মানুষ।

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলায় মোট ৩৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলাতেই রয়েছেন ২৯ জন। বাকিদের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৪ জন, সুনামগঞ্জে ৩ জন এবং হবিগঞ্জে ২ জন রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে গতকাল বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট বিভাগে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মারা যাওয়া ব্যক্তি সিলেট জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এ ছাড়া গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলার হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৪৫ জন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ১৪৬ জন, সিলেটে ৭৪ জন, হবিগঞ্জে ২০ জন ও মৌলভীবাজারে ৫ জন রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, সিলেটে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে প্রতিদিনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আগের দিন সকাল আটটা থেকে পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা প্রতিবেদনে চলতি মাসের টানা ১০ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১ জুন ২ জন, ২ জুন ৪ জন, ৩ জুন ১ জন, ৪ জুন ২ জন, ৫ জুন ৩ জন, ৬ জুন ২ জন, ৭ জুন ৩ জন, ৮ জুন ১ জন, ৯ জুন ২ জন এবং ১০ জুন ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে সিলেটে প্রথমবারের মতো করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ১৫ এপ্রিল। ওইদিন ভোরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন ঢাকার কুর্মিটুলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে ৪ এপ্রিল তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। করোনা শনাক্তের পর তিনি সিলেটে নিজ বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ৭ এপ্রিল হঠাৎ তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাঁকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে ৮ এপ্রিল বিকেলে পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

১৫ এপ্রিলের পর থেকে কিছুদিন পর পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছিল। কিন্তু এখন গত ১০ দিন ধরে টানা মৃত্যুর ঘটনা চলতে থাকার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা। তিনটি কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে বলে তাঁদের ধারণা। এগুলো হচ্ছে : সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ব্যাপকভাবে সিলেটে আসা, হাটবাজার, বাস টার্মিনাল ও জনসমাগমস্থলে মানুষের উপচেপড়া ভিড় এবং মাস্ক-গ্লাভস না পরে রীতিমতো স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের চলাচল।

একাধিক নগরবাসী জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে এলাকাভেদে ‘লকডাউন’ ঘোষণা সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় পুনরায় সিলেট বিভাগে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা উচিত। নতুবা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। কারণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় সংক্রমণের হারের ভিত্তিতে সিলেট বিভাগের চার জেলাই ‘রেড জোন’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সেজন্য হাটবাজার ও জনসমাগমস্থলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল বুধবারও সিলেট বিভাগের চার জেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘ভীতি বা আতঙ্কের কিছু নেই। কেবল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলেই করোনাভাইরাস এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। ঘরের বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি বাসায় সাবান দিয়ে নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়াও উচিত। অবশ্যই জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে, সিলেটে প্রচুরসংখ্যক মানুষ মাস্ক না পরে গণপরিবহনে চড়ছেন, রাস্তায় শরীর ঘেঁষাঘেঁষি করে হাঁটছেন, নিজেদের স্বার্থেই সেসব পরিহার করতে হবে।

এএন/বিএ- ০১