সিলেটে নমুনাজট, অপেক্ষায় ৬ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ১২, ২০২০
০৬:০২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১২, ২০২০
০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন



সিলেটে নমুনাজট, অপেক্ষায় ৬ হাজার
করোনা পরীক্ষা

সিলেটে প্রতিদিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে শুধু সিলেট জেলাতেই বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ১৬৩ জন। 

তবে এটা সিলেটের করোনার প্রকৃত চিত্র নয়। কারণ নমুনা জমা দেওয়ার পর অনেক দিন পার হলেও রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৫ হাজার ৯৬২ জন নমুনা প্রদানকারী করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

ওসমানী হাসপাতালে কিছুদিন পরপর নমুনা জমে যাচ্ছে। তখন তা পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। আর এতে করে রিপোর্ট আসতে লাগছে দীর্ঘ সময়।  সময়মতো রিপোর্ট না পাওয়ায় সিলেটে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক।

জানা যায়, প্রথম দিকে ঢাকা থেকে সিলেটের সকল নমুনা পরীক্ষা করা হতো। পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা শুরু হলে এখানেই বিভাগের সব নমুনা পরীক্ষা করা হতো। তবে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওসমানী থেকে রিপোর্ট আসতে লাগতে শুরু করে দীর্ঘ সময়। তাই এখন শুধু সিলেট জেলার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে। 

অপরদিকে সুনামগঞ্জ জেলার নমুনা পরীক্ষা হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে এবং হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের পরীক্ষা হয় ঢাকার ল্যাবে।

চার জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় নমুনা জমা পড়েছে ৮ হাজার ৩০০টি এর মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৫টি। এখনও সিলেট জেলায় ৩৮২৫টি নমুনার রিপোর্ট আসেনি। এছাড়া সুনামগঞ্জে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজার ১৮৬টি। আর পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৪টি। এখনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি ৭১২টি নমুনার। 

এদিকে, হবিগঞ্জে নমুনা জমা হয়েছে ৫ হজার ১৭৫টি। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০টি।  রিপোর্ট আসেনি ৮২৫টি নমুনার। আর মৌলভীবাজারে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। এখনও রিপোর্ট আসেনি প্রায় ৬০০টি নমুনার।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, 'এই মাসের ২ থেকে ১১ তারিখে যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে আজ ২৯০টি নমুনার রিপোর্ট এসেছে।'

সিলেটের নয়াসড়ক এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তিনি গত মাসের ২৭ তারিখ থেকে জ্বর-সর্দিতে ভুগছিলেন। গত ৩ জুন সিলেট শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে গিয়ে নমুনা জমা দিয়ে আসেন। এই প্রতিবেদনে লেখার আগ পর্যন্ত তিনি এখনও রিপোর্ট পাননি।

এমন অভিযোগ অনেকের। তারা বলছেন নমুনা জমা দেওয়ার পর প্রায় ৭ থেকে আটদিন এমনকি দশদিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে পরীক্ষার ফল জানতে। এতে করে অনেকেই উপসর্গ নিয়ে চলাফেরা করছেন। যাচ্ছেন অন্যদের সংস্পর্শে। এই কারণে সিলেটে সামনের দিনগুলোতে করোনা সংক্রমণ আরও ব্যাপক হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ সিলেট মিররকে বলেন, 'নমুনা সংগ্রহ করার পর দ্রুত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে উপসর্গ নিয়ে রোগীরা, রাস্তায়-বাজারে ঘুরবেন। আর এতে সংক্রমণ আরও অনেক বাড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রথম থেকেই আমরা দেখছি গাফিলতির মধ্য দিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আর গাফলতির সময় নেই। অবিলম্বে সিলেটে আরও পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে দ্রুত রিপোর্ট প্রকাশের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, নমুনা জট তৈরি হওয়ায় কিছু নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে সিলেটে আরও কিছু পিসিআর মেশিন আসবে।

তিনি আরও জানান, হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের জন্য একটি এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পিসিআর মেশিন স্থাপনের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে সিলেট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে একটি এবং সুনামগঞ্জে একটি পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হবে।

এনএইচ/জেএসএস/বিএ-০১