কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ১৫, ২০২০
০৪:১২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৫, ২০২০
০৪:১২ অপরাহ্ন



কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা নেতা

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেটের কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা এক নেতা। ‘সিলেটের জননন্দিত মেয়র’ তকমাটি যেন তাঁর জন্যই। আজ তাই শোকে ভাসছে সিলেট। কান্নায় ভারী হয়ে ওঠেছে নগরের বাতাস। 

পৌরসভা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন। সর্বদাই নগরবাসীর সুখ দুঃখের সঙ্গী ছিলেন তিনি। এরপর নগরপিতার আসনটি ছাড়তে হলেও নামের পাশে থেকেই যায় ‘মেয়র কামরান’। 

রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে যার থাকা প্রয়োজন ছিল, করোনাই কেড়ে নিল সেই গণমানুষের নেতার প্রাণ।

ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। যোগ দেন ছাত্রলীগে। আর ১৯৭৩ সালে ছাত্রাবস্থায়ই সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ট কমিশনার নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দেন কামরান।  রাজনীতির মাঠের এ বরপুত্রের রাজনৈতিক উত্থানের শুরুটা এমনই। এরপর পৌরসভার তিন তিনবারের নির্বাচিত কমিশনার। পরে পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং পরপর দুবার নির্বাচিত মেয়র। টানা ১৮ বছর নগর সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি।

১৯৭৭ সালে নির্বাচন হলো। কমিশনার নির্বাচিত হলেন তিনি। তারপর কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে চলে গেলেন কামরান। দেশে এসে ১৯৮৯ সালে আবারও নির্বাচনে অংশ নিলেন। তখনও তিনি একই ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। তখন তার প্রতীক ছিল আনারস।

সেই সাফল্যের পথ ধরে এভাবে ১৯৯৫ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিজ দল ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি দুইবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন। কিন্তু ২০১৩ সালে নিজ দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিরোধী দলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় মেনে নিতে হলো জনপ্রিয় এই নেতাকে। 

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জন্ম ১৯৫৩ সালে। পড়াশোনার পাঠ শুরু হয় দুর্গাকুমার পাঠশালায়। এরপর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। 

সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০০২ সালের ২৮ জুলাই। বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নবগঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হয়। 

২০০৩ সালের ২০ মার্চের নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে তৎকালীন সরকারি দল বিএনপির প্রার্থী এম এ হককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সিলেটের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। 

ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাগারে থেকেও কামরান বিএনপির প্রার্থী এম এ হককে ফের পরাজিত করে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। 

২০১৩ সালে ছাড়তে হয় ১৮ বছরের প্রতিনিধিত্ব। এবার বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে বসেন কামরান। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের ফলাফলেও একই বৃত্তে আটকা পড়েন কামরান। আবারও হেরে যান আরিফের কাছে।

ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৭ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন কামরান। এক মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর ২৮ মে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। ওই মাসে কারান্তরীণ হন তিনি।

কারাগারে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনী প্রচারের জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা শোনা গেলেও পরে তা হয়নি। অবশেষে তার নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত হয় ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট নাগরিক পরিষদ। কারাগারে থেকে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি আবারও ইতিহাস গড়েন। তখন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সে সময় মেয়র কামরান সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ ফ ম কামাল ৩২ হাজার ৯৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কামরানকে বাদ দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। আর কামরানকে করা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

বিএ-০৫/এনপি-০১