করোনায় আক্রান্ত জামালগঞ্জের প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জুন ১৫, ২০২০
০৯:৫৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৫, ২০২০
০৯:৫৮ অপরাহ্ন



করোনায় আক্রান্ত জামালগঞ্জের প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

ডা. মনিসর চৌধুরী

করোনায় সম্মুখযোদ্ধাদের একজন ডা. মনিসর চৌধুরী। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা। তাঁর দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ছিলেন। বর্তমানে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। করোনাগ্রস্ত মানুষের সেবা নিশ্চিতে নিজেকে অকৃপণ বিলিয়ে দেওয়া এই মানবিক চিকিৎসক অবশেষে করোনায় আক্রান্ত হলেন। এখন হোম আইসোলেশনে আছেন তিনি। প্রবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েই তিনি আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

জামালগঞ্জের মানুষের কাছে অধিক পরিচিত ডা. মনিসর চৌধুরী করোনাক্রান্ত হওয়ায় সেখানকার মানুষও তাঁর খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এ উপজেলায় ১৩ বছরের দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনে সাধারণ মানুষকে অকাতরে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই মানবিক গুণসম্পন্ন এই চিকিৎসকের দেহে করোনা ধরা পড়ায় অনেকে তাঁর দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করেছেন। দীর্ঘদিন এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে ভিন্ন কর্মস্থলে চলে গেলেও এখনও ডা. মনিসর চৌধুরীর নাম নিয়ে অনেকে প্রশংসা করেন তাঁর।

সেবাব্রতী এই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুনামগঞ্জ শহরের শান্তিবাগ এলাকার নিপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ও মঞ্জুশ্রী চৌধুরী দম্পতির তিন সন্তানের একজন তিনি। দুই বোনের এক ভাই ডা. মনিসর চৌধুরী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে ২৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট প্রথমে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। জামালগঞ্জে দীর্ঘ ১৩ বছর সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয় তাকে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় গত ১৩ জুন তিনি করোনায় আক্রান্ত হন।

ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, 'আসলে পৃথিবীব্যাপী যে মহামারী দেখা দিয়েছে তাতে কেউ প্রস্তুত ছিল না। করোনা মোকাবেলায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রথম থেকেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি যে কর্মস্থলে আছি সেটা প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে বাধ্য করেছি। এখানে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৮৪-৮৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনেকের বাসায় গিয়েও চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।'

নিজের আক্রান্তের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, 'একজন চিকিৎসকের প্রধান কাজ রোগীর সেবা নিশ্চিত করা। সেই সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি ঠিক, তবে এর মাঝে আলাদা তৃপ্তিবোধ আছে। এখন সবার আশীর্বাদ চাই। মানুষের আশীর্বাদেই হয়তো সেরে উঠব।'

 

বিআর/আরআর-০১