সুরমার ভাঙনে হুমকিতে মুক্তিযোদ্ধার 'বীর নিবাস'

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


জুন ১৬, ২০২০
০২:২০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৬, ২০২০
০২:২০ পূর্বাহ্ন



সুরমার ভাঙনে হুমকিতে মুক্তিযোদ্ধার 'বীর নিবাস'

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি, ফলদবৃক্ষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তীরবর্তী অনেক মানুষ। ইতোমধ্যে উপজেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকবছরে উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁও, মংলারগাঁও, মুরাদপুর, মাছিমপুর গ্রামসহ সুরমা ইউনিয়নের নূরপুর-সোনাপুর, মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর, আমবাড়িসহ প্রত্যন্ত এলাকার অনেকেই শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। নদীভাঙনের তীব্রতায় উপজেলা সদরের কয়েকটি গ্রামের মানুষ কোথাও আশ্রয় না পেয়ে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে উপজেলার ব্রিটিশ সড়কের ধারে। নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে শতাধিক অসহায় পরিবারের লোকজন এখনও ওই সড়কের ধারেই বসবাস করছেন।

সুরমা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকের মতোই নিঃস্ব হয়েছেন উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। কয়েকবছর ধরে অব্যাহত নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে তাঁর পৈতৃক ভিটা, ফসলি জমি, ফলদবৃক্ষসহ দুই একর ভূমি। এবার বর্ষা শুরু হতেই নদীভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ওই মুক্তিযোদ্ধার ‘বীর নিবাস’ নামের বসতঘরটি এখন ভাঙনের কবলে রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোচিত অবদানের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ‘বীর নিবাস’ বাড়িটি পেয়েছিলেন। অব্যাহত নদীভাঙনের ফলে এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া ওই বসতঘরটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুরমা নদীর ভাঙন রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত উদ্যোগের ফলে ইতোমেধ্যে এ খাতে কয়েক কোটি টাকা জলে গেছে। কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না সুরমার ভাঙন। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে খোদ উপজেলা পরিষদের কার্যালয়সহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সুরমা নদীর ভাঙন রোধে বড় ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের নদীভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, 'গত কয়েকবছর ধরে সুরমা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছি। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে ইতোমধ্যে আমার ভাই-ভাতিজারা ভিটেমাটিহীন হয়েছে। বসতবাড়ি না থাকায় আমাকে বাড়ি উপহার দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন নদীভাঙনের কবলে পড়ায় সেই বসতঘরটিও হুমকির মুখে রয়েছে। নদীভাঙন রোধে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি বরাদ্দের টাকায় বালির বস্তা ফেলা হলেও মাঝেরগাঁও গ্রামে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এই বাড়িটি নদীতে চলে গেলে আমার আর যাওয়ার জায়গা নেই। আমি বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'

 

এইচএইচ/আরআর-১৬