কমলগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা, তবু নেই সচেতনতা

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


জুন ২৯, ২০২০
০৬:৫৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৯, ২০২০
০৬:৫৮ অপরাহ্ন



কমলগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা, তবু নেই সচেতনতা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। তবু মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। কমে গেছে মাস্কের ব্যবহার। করোনায় আক্রান্ত হলে ১৪ দিন হোম আইসোলেশনে থাকার পরার্মশ দিলেও তা মানছেন না অনেকেই। প্রশাসনিক নির্দেশনা অমান্য করে অবাধে ঘোরাফেরা করার খবর পাওয়া গেছে।

দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা থাকলেও তা মানছেন না অনেকেই। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও হাট-বাজারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাচল করছেন লোকজন। পূর্বের তুলনায় মাস্ক ব্যবহারের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসন মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। করোনায় আক্রান্তের অনেকেই ১৪ দিনের হোম আইসোলেশন না মেনে অবাধে ঘোরাফেরার খবর পাওয়া গেছে। ফলে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে সচেতন মহলের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার (২৯ জুন) দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমলগঞ্জে মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৫শ ৫ জনের। তাদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৫ জন ও হোম আইসোলেশনে আছেন ১৯ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ জন। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার সংখ্যা ৪শ ৩৩ জন। তাদের মধ্যে ৪শ ১০ জন হোম কোয়ারেন্টিন থেকে বের হয়েছেন। বাকি ২৩ জন রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টিনে।

গত ২৭ এপ্রিল রাতে করোনার সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আলীনগরের ফাঁড়ি চা-বাগান সুনছড়ার চৈতু কর্মকার। এরপর ১ মে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সোনালী ব্যাংক কমলগঞ্জ শাখার এক কর্মকর্তা ও এক নিরাপত্তাকর্মী। এর দুইদিন পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সোনালী ব্যাংক ভানুগাছ শাখার এক পিয়ন, কমলগঞ্জ পৌরসভার ধানসিঁড়ি আবাসিক এলাকার এক বৃদ্ধ ও কমলগঞ্জ সদর ইউনয়িনের বাদে উবাহাটা গ্রামের এক বৃদ্ধ। এরপর কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই কর্মচারী ও কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারের সবুজবাগ আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের এক নার্স করোনায় আক্রান্ত হন। সব মিলিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ জন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ভানুগাছ, শমশেরনগর, আদমপুর, মুন্সীবাজার, পতনঊষার, নয়াবাজার, রাজদিঘীরপারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে সন্ধ্যার পরও কিছু দোকানপাট খোলা থাকে ও জনসমাগম ঘটে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হাট-বাজারে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বিকেল ৪টার পর ফার্মেসি ব্যতীত সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। সামাজিক দূরত্ব না মেনেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লোকজন চলাফেরা করছেন। বর্তমানে সচেতন মহল ব্যতীত অন্যরা মাস্ক ব্যবহারও বন্ধ করে দিয়েছেন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সচেতনতা প্রথম প্রথম লোকজনের মধ্যে কিছুটা দেখা গেলেও এখন হাত পরিষ্কারেরও প্রয়োজন বোধ করছেন না অনেকেই। 

সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলেও গভীর রাত পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়জন যাত্রী নিয়ে অবাধে চলাচল করছে। অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলোতে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন মাঝে-মধ্যে হাট-বাজারসমূহে অভিযান ও জরিমানা করলেও তাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে না।

আলাপকালে ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক, শেখর দে, অমিত ধর, সিদ্দিকুর রহমান, প্রভাষক জমসেদ আলী, শিক্ষক নুরুল মোত্তাকীনসহ কমলগঞ্জের স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বাড়লেও হাট-বাজারে জনসমাগম বাড়ছে। অথচ মাস্ক ব্যবহার না করে ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রচলন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে তারা দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, নমুনা সংগ্রহে কমলগঞ্জে কোনো সমস্যা নেই। যারাই নমুনা দিতে আসবেন তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাছাড়া করোনা আক্রান্তদের বাড়ি এখন লকডাউন করা হচ্ছে না। তাদেরকে হোম আইসোলেশনে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদিও খবর পাওয়া গেছে অনেকে তা মানছেন না। যারা এই হোম আইসোলেশন মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সবাইকে সচেতনতার মাধ্যমেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, প্রতিনিয়ত উপজেলার হাট-বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। তারপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

 

এসডি/আরআর-০৪