কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি, ব্যবস্থাপকের বাসভবন ঘেরাও

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


জুন ২৯, ২০২০
১০:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৯, ২০২০
১০:০৯ অপরাহ্ন



কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি, ব্যবস্থাপকের বাসভবন ঘেরাও

গাছ কাটার অভিযোগে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী মাধবপুর ইউনিয়নের ব্যক্তি মালিকানাধীন ধলই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ও তার লোকজনের হামলায় আহত হয়েছেন এক চা শ্রমিক সন্তান। গত ২৩ জুন ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে বিচার দাবি করেও বিচার না পেয়ে আজ সোমবার (২৯ জুন) কর্মবিরতি পালন করেছেন চা শ্রমিকরা। এসময় বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা ব্যবস্থাপকের বাসভবন ঘেরাও করেন। বিষয়টি সমাধানে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও চা-বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।

ধলই চা-বাগানের চা শ্রমিকরা জানান, বাগানের ৯ নম্বর লাইনে গাছ কাটার অভিযোগ এনে গত ২৩ জুন বড় লাইনের রাধেশ্যাম ভরের ছেলে চা শ্রমিক হীরা ভরকে (২২) সেকশন থেকে ধরে নিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করেন বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ও তার লোকজন। আহত চা শ্রমিককে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় চা-বাগানের শ্রমিকরা আহত শ্রমিকের চিকিৎসাসেবা ও হামলার বিচার দাবি করলে কালক্ষেপন করে সময় অতিবাহিত করেন ব্যবস্থাপক। 

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধলই চা-বাগানের বড় লাইন শ্রমিক বস্তির চা শ্রমিক রাধে শ্যামের ছেলে হীরা ভরের উপর প্লান্টেশন এলাকা থেকে একটি গাছ কাটার অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে ধলই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ও তার ঘনিষ্ট কয়েকজন লোক মিলে হীরা ভরকে আটক করে বেধড়ক মারধর করেন। হীরা ভরের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে প্রথমে তাকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ওই রাতেই তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ধলই চা-বাগানের সাধারণ শ্রমিকরা এ ঘটনার বিচার প্রার্থনা করলে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম কালক্ষেপণ করেন। ফলে সাধারণ চা শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে আজ সোমবার সকাল ১০টায় ধলই চা-বাগানের কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ও একই সঙ্গে ব্যবস্থাপকের বাংলো ঘেরাও করে কর্মবিরতি পালন করেন।

এ ঘটনায় সোমবার মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি, সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, ধলই চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ধলই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের উপস্থিতিতে সামজিক বৈঠক বসে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা ৪ ঘন্টা সামাজিক বৈঠক হলেও ব্যবস্থাপকের অসহযোগিতায় সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। একপর্যায়ে ব্যবস্থাপক বৈঠক ছেড়ে তার বাংলোয় চলে যান। এতে সাধারণ চা শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা বেড়ে যায়।

মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। সাধারণ চা শ্রমিকরা তার নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার। সাম্প্রতিক ঘটনায় কোনো প্রকার যাচাই না করেই কয়েকজন পাহারাদারকে নিয়ে হীরা ভরকে আটকে বেধড়ক পিটিয়েছেন তিনি। 

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, সাধারণ চা শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, মূলত বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামই এই চা-বাগানের গাছ কেটে বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ছোটখাটো অপরাধের জন্য সাধারণ চা শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে ওই টাকা নিজের পকেটে নেন ব্যবস্থাপক। আজকের কর্মবিরতিতে শ্রমিকদের একটি দাবি ছিল অবিলম্বে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে এই চা-বাগান থেকে বদলি করা।

অভিযোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে ধলই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম কর্মবিরতির কথা স্বীকার করে বলেন, সমস্যা সমাধানে আলাপ-আলোচনা চলছে। 

 

এসডি/আরআর-১০