বড়লেখায় কলেজছাত্রের মৃত্যু ঘিরে রহস্য

বড়লেখা প্রতিনিধি


আগস্ট ০৪, ২০২০
১০:২৩ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২০
১০:২৩ অপরাহ্ন



বড়লেখায় কলেজছাত্রের মৃত্যু ঘিরে রহস্য
পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ

মো. সাইফুর রহমান

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. সাইফুর রহমান (২৭)। সাইফুরের স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতে সাপে কাটার নাটক সাজিয়ে তা প্রচার করা হয়েছে।

সাইফুর রহমান উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে। তিনি সিলেট পলিটেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৩১ জুলাই বিকেলে বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে গত রবিবার (২ আগস্ট) বিকেলে সাইফুরের লাশ দাফন করা হয়েছে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুর রহমান পরিবারের সঙ্গে সিলেটে বসবাস করেন। ঈদ উদযাপন করতে গত ৩০ জুলাই রাতে তিনি একাই গ্রামের বাড়িতে এসে মামার বাড়িতে ওঠেন। রাতে ১১টার দিকে একটি নম্বর থেকে ফোন পেয়ে মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরদিন ৩১ জুলাই বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখে প্রতিবেশীরা তাকে ডাকাডাকি করে তার কোনো সাড়া শব্দ পাননি। পরে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখেন সাইফুর রহমানের নিথর দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে রাতে পুলিশ সেখানে যায়। ওইসময় তার কোমরের পাশে সাপে কাটার মতো দাগ দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা ছিল, রাতের যেকোনো এক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের ছোবলে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান সাপের ছোবলে তার মৃত্যু হয়নি। এছাড়া তার শরীরের কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

নিহত সাইফুর রহমানের চাচা সৎপুর গ্রামের বলাই মিয়া আজ মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) দুপুরে বলেন, 'আমার ভাতিজা সাইফুর পরিবারের সঙ্গে সিলেটে থাকে। সে সেখানে একটি কলেজে লেখাপড়া করে। দীর্ঘদিন পর ঈদ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাতে সে বাড়িতে বেড়াতে এসে প্রথমে আমাদের বাড়িতে আসে। রাতে তাকে আমাদের বাড়িতে থাকার জন্য বলি। কিন্তু সে থাকেনি। বলেছে তার মামার বাড়ি যাবে। রাতে সে তার মামার বাড়ি মুদৎপুর গ্রামে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেয়। এ সময় সে জানায় যে কয়েকদিন থেকে একটি ফোন নম্বর থেকে তাকে বিরক্ত করা হচ্ছে। পরদিন শুক্রবার বিকেলে আমরা জানতে পারি যে সে নাকি তার বাড়িতে সাপের কামড়ে মারা গেছে। পরে আমরা সেখানে যাই। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। পরে পুলিশের নির্দেশে আমরা তাকে বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালের ডাক্তাররা জানান যে তাকে সাপে কাটেনি। হত্যা করা হয়েছে। পরে আমরা তাকে নিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরাও বলেছেন যে তাকে সাপে কাটেনি, হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের কয়েক জায়গায় তারা আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন।'

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই-ভাবী (সাইফুরের বাবা-মা) কেউই বাড়িতে থাকেন না। আর সাইফুরের কাছে এই বাড়ির (যে বাড়িতে তার লাশ পাওয়া গেছে) চাবিও থাকার কথা নয়। আমার ভাই তার এক প্রতিবেশীর কাছে বাড়ির চাবিটি দিয়েছিলেন, যিনি বাড়িটি দেখাশোনা করেন।'

তাহলে সাইফুর ওই ঘরে ঢুকলেন কিভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নিশ্চয়ই কেউ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যার পর তার লাশ ঘরের মেঝেতে রেখেছে। এখন ঘটনা আড়াল করতে সাপে কাটার নাটক সাজানো হয়েছে। আমরা থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ বলেছে তারা ঘটনাটি তদন্ত করে মামলা গ্রহণ করবে। আমরা চাই পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত করে এর সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করুক।'

নিহত সাইফুর রহমানের মামা মুদৎপুর গ্রামের সেলিম উদ্দিন বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার রাতে সে আমাদের বাড়িতে আসে। রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে ছিল। রাতে তাকে আমাদের বাড়িতে থাকার জন্য বলা হলেও সে থাকেনি। এ সময় তার ফোনে বার বার কল আসছিল। তখন সে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায়। এখন কে তাকে কল দিয়েছে, কেন দিয়েছে, সেটা যদি পুলিশ তদন্ত করে তবে তা বেরিয়ে আসবে। তখন বোঝা যাবে আসলে কে আর কেন তাকে হত্যা করেছে।'

তিনি বলেন, 'সাইফুরের বাড়ির কাছের প্রতিবেশী এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পূর্ববিরোধ ছিল বলে জানতে পেরেছি। হয়তো তারা তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করে লাশ ঘরে রেখেছে। পরে এলাকায় সাপে কাটায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেছে।'

নিহত সাইফুর রহমানের ছোট ভাই এমদাদুর রহমান বলেন, 'সাপের ছোবলে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। যে বা যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'

এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, 'আমরা নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। এরপরও ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।'

 

এজে/আরআর-০৯