শায়েস্তাগঞ্জ পশু হাসপাতাল : অযত্নে পরিত্যক্ত ভবন

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


আগস্ট ২৯, ২০২০
০৭:০৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৯, ২০২০
০৭:১১ অপরাহ্ন



শায়েস্তাগঞ্জ পশু হাসপাতাল : অযত্নে পরিত্যক্ত ভবন

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তালুগড়াইয়ে জঙ্গলবেষ্টিত একটি স্থান রয়েছে। সেখানে আছে একটি পুরোনো ভাঙা ভবন। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো হাসপাতাল হতে পারে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি ছিল শায়েস্তাগঞ্জ পশু হাসপাতাল। প্রায় ২৮ শতাংশ জমির উপর ১৯০৩ সালে হাসপাতালটি স্থাপিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের আমলে নির্মিত এ হাসপাতালে শায়েস্তাগঞ্জ অঞ্চলসহ প্রায় ১০টি চা-বাগানের পশুদের চিকিৎসাসেবা চলে আসছিল। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালুরত অবস্থায় এরশাদ সরকারের আমলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে হাসপাতালটির এ করুণ পরিণতি ঘটে। হাসপাতালটি এখন পরিত্যক্ত। কিছু লোক ভাগাড় হিসেবে এটি ব্যবহার করছেন। ময়লা-আবর্জনার স্তুপে হাসপাতালটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। এর পাশ দিয়ে গেলে দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়। দেখলে বোঝা কঠিন যে এটি ছিল পশু হাসপাতাল।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন এ হাসপাতালে একজন এসডিএলও, দু'জন ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও একজন ভেটেরিনারি সহকারী পশুদের চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করেন। একে একে এ হাসপাতাল থেকে সবাই অন্যত্র চলে যান। এরপরও একজন ভেটেরিনারি সহকারীর মাধ্যমে শুধু কৃত্রিম প্রজনন চালু ছিল। ওই ভেটেরিনারি সহকারী চলে গেলে সেখানে পশু চিকিৎসা কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। 

শায়েস্তাগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকা এখনও কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সেই হিসেবে অনেকের গবাদি পশু রয়েছে। অনেকে আবার বাণিজ্যিকভাবে গবাদি পশু লালন-পালন করছেন। কিন্তু চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন পশুর মালিকরা। এ কারণে শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় গবাদি পশু পালন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুর রকিব বলেন, 'একসময় বিসিএস ডাক্তার দিয়েই চলত এ হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতালের পাকা ভবনটি সেই মান্ধাতা আমলে ভেঙে পড়েছিল। এরপর বাঁশের বেড়া ও টিনের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় আরেকটি ভবন। কয়েকবছর আগে প্রবল ঝড়ে সেটিও ভেঙে পড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পশু চিকিৎসা কার্যক্রম।'

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ তালুকদার বলেন, 'আমি এ বিষয়ে অবগত আছি। শায়েস্তাগঞ্জ নতুন উপজেলা। তাই নতুন হাসপাতাল হতে একটু সময় লাগবে। তবে ধীরে ধীরে সবই হবে।'

জানা গেছে, এ উপজেলায় গত ১৭ নভেম্বর প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. রমাপদ দে। কিন্তু তার বসার স্থান না থাকায় পৌরসভার লেঞ্জাপাড়ায় একটি ভবন ভাড়া নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রমাপদ দে বলেন, 'আমি যোগদান করে ভাড়ায় ভবন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি। আমার সঙ্গে  সহকর্মী হিসেবে রয়েছেন উপ-সহকারী প্রাণী চিকিৎসক মো. বদিউজ্জামান। আমরা কৃত্রিম প্রজনন, বিভিন্ন রকম ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম চালাই ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামুল্যে কিছু ওষুধ দিয়ে আসি। সুরঞ্জিত হালদার নামের একজন আমাদের সহায়তা করে থাকেন। তিনি প্রতিমাসে ৪০-৫০টি কৃত্রিম প্রজনন সেবা বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসেন।'

ডা. রমাপদ দে আরও বলেন, 'নতুন হাসপাতালের জন্য আমি হবিগঞ্জ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেছি। এখনও কোন সাড়া পাইনি। যেহেতু শায়েস্তাগঞ্জ নতুন উপজেলা, সেহেতু একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে শায়েস্তাগঞ্জ ড্রাইভার বাজারে আমাদের বেশ কিছু জায়গা রয়েছে। সেখানে হাসপাতাল করা যেতে পারে।'

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, 'শায়েস্তাগঞ্জ একটি নতুন উপজেলা। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছি নতুন করে হাসপাতাল নির্মাণ করার জন্য। নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করার জন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। আমি আশাবাদী খুব শিগগির অনুমোদন পেয়ে যাব।'

 

এসডি/আরআর-০২