ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে ধর্ষিত হন একজন

সিলেট মিরর ডেস্ক


সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০
১০:৩৩ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০
১০:৩৭ অপরাহ্ন



ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে ধর্ষিত হন একজন

ভারতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। দেশটির ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র হিসাব মতে, ২০১৮ সালে ৩৩ হাজার ৯৭৭টি ধর্ষণের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। তবে ধর্ষণ প্রতিরোধে আন্দোলনকারীদের দাবি, ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশী। সব ঘটনা নথিবদ্ধ হচ্ছে না। এদিকে ধর্ষণের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও কিছু ঘটনা মানুষকে হতবাক করে দেয়। এমনই এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে রাজধানী দিল্লীতে। ৩০ বছর বয়সী এক যুবক ধর্ষণ করেছেন ৮৬ বছরের বৃদ্ধাকে।

দিল্লীর নারী বিষয়ক কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল জানান, গত সোমবার ওই বৃদ্ধা নিজেদের বাড়ির সামনে দুধওয়ালার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময় ওই ধর্ষক বৃদ্ধাকে জানায়, আজ দুধওয়ালা আসবে না। পাশের কোনো এক জায়গায় দুধ পাওয়া যাবে বলে ধর্ষণকারী বৃদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে যায়। সেখানে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয়।”

ঘটনার সময় বৃদ্ধা অনেক অনুনয় বিনয় করে তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। ধর্ষককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি আমার নাতীর বয়সী।’ কিন্তু বৃদ্ধার কোনো কথা না শুনেনি ওই সে। বাধা দিতে গেলে বৃদ্ধাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে ওই ধর্ষক। স্থানীয় গ্রামবাসী চিৎকার শুনে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। ধর্ষককে গ্রামবাসী পুলিশে সোপর্দ করে।

গতকাল মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্বাতী মালিওয়াল বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাতের পর ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। তিনি জানান, বৃদ্ধার মুখমন্ডলসহ পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত।বৃদ্ধা এখন জটিল ট্রমার মধ্যে আছেন।

স্বাতী মালিওয়াল জানান, তিনি যা দেখেছেন সেটা কোন মানুষের কাজ হতে পারে না। তিনি দিল্লী আদালতের প্রাধান বিচারপতি এবং শহরের লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের কাছে চিঠি লিখবেন বলে জানিয়েছেন। যাতে এই মামলাটি ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ মামলা হিসেবে বিবেচনা করে অভিযুক্তকে ৬ মাসের মধ্যে ফাঁসতে ঝুলানো হয়।

ভারতে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় হয় ২০১২ সালে। সে বছর দিল্লীর রাস্তায় চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর নির্মম নির্যাতন করা হয়। ঘটনার কয়েক দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।

সেই ঘটনায় চার ধর্ষণকারীর গত মার্চে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হলেও ভারতে এ ধরণের নির্যাতন বাড়ছেই।

ভারতের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র হিসাব মতে, ২০১৮ সালে ৩৩ হাজার ৯৭৭টি ধর্ষণের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

তবে ধর্ষণ প্রতিরোধে আন্দোলনকারীদের দাবি, ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশী। কারণ ধর্ষণের অনেক ঘটনা নথিবদ্ধ হয় না। সব ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয় না। কেবলমাত্র গুটিকয় বিভৎস ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ভারত যে সময়ে করোনা মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত, সে সময়ে আখের ক্ষেতে ১৩ বছরের এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়। কিশোরীর বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে কেবল ধর্ষণ করা হয়নি, নির্যাতনকারীরা মেয়েটির চোখ তুলে নিয়েছে, জিহ্বা কেটে দিয়েছে।

গত জুলাই মাসে ৬ বছরের এক শিশু কন্যাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষককে যাতে চিনতে না পারে সে জন্য তার চোখে আঘাত করা হয়।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ইয়োগিতা ভ্যায়না বলেন, কোনো বয়সের নারীই ভারতে নিরাপদ নয়। আমি কয়েক মাস বয়সী শিশু থেকে ৬০ বছর বয়সী প্রৌঢ়াকেও ধর্ষিত হতে দেখেছি।

২০১২ সালে দিল্লীর রাস্তায় বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় সারা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হলে ভারতে ধর্ষণের অপরাধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের বিচারের বিধান করে অপরাধীর সর্বোচ্চ শান্তি নির্ধারণ করা হয় মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রান্তিক পর্যায়ে পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

ইয়োগিতা ভ্যায়না বলেন, ‘পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ নারীর সুরক্ষার বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে থাকা উচিত। কিন্তু অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থানই পায় না।’

‘‘ভারত বহিঃশত্রু থেকে দেশ নিরাপদ রাখার কথা বলে। কিন্তু আমার প্রশ্ন দেশের ভেতরে নারী, শিশুর নিরাপত্তা দেবে কে? বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় বহু নির্বাচনী প্রচারণায় নরেন্দ্র মোদী দিল্লীকে ধর্ষণের রাজধানী বলেছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাষণে বলেছিলেন, নারী-শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিয়ে আসবেন।’’

সেদিন মোদি আরও বলেছিলেন, ‘‘ছেলে শিশুদের কীভাবে গড়ে তুলতে হবে সে বিষয়েও অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, কোনো ধর্ষণের ঘটনার ঘটেছে জানলে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। প্রত্যেক ঘরে ঘরে মেয়ে সন্তানকে জিজ্ঞেস করা হয় কোথায় যাচ্ছো, কখন ফিরবে। যেখানে যাচ্ছো সেখানে পৌঁছানোর পর জানাবে। কিন্তু ছেলে সন্তানকে কি কখনো এসব প্রশ্ন করা হয়? কেন যাচ্ছে, তার বন্ধু কারা এসব খোঁজ নেওয়া হয়? যে ধর্ষণ করে সে কারো না কারো সন্তান।’’

সে কারণে ছেলে সন্তানের উপর নজর রাখার পরামর্শ দেন নরেন্দ্র মোদী।

ভারতের সামন্ততান্ত্রিক এবং রক্ষণশীল সমাজের জন্য ওই কথাগুলো বৈপ্লবিক ছিলো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যৌন নির্যকতানের ঘটনাগুলোর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী পরিবারের ছেলেরা জড়িত।

কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীকে চুপ থাকতেই দেখা গেছে।২০১৮ সালে নিজ দলের লোকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আসলে তিনি অবশ্য সামাজিক মাধ্যম টুইটারে বলেছিলেন, “ভারতের মেয়েরা অবশ্যই বিচার পাবে।’’

ইয়োগিতা ভ্যায়না বলেন, কোনো জাদুবলে একদিনে যৌন নির্যাতন বন্ধ হবে না। সমাজের অনেক কিছুতে পরিবর্তন ঘটাতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

‘‘বিশেষ করে পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সর্বোপরি লিঙ্গ বিষয়ক সচেতনা বাড়াতে হবে। মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটাতে কাজ করতে হবে। সেটা অবশ্যই অনেক কঠিন কাজ।’’

 

এএফ/০২