হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা

শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
০৪:৩৯ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
০৪:৩৯ অপরাহ্ন



হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ‘হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ কথাটি সংযুক্ত করে আইন পাস করায় সদর উপজেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করতে হবে। তাই বানিয়াচংয়ের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সবুজ চত্বর ও খাস জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগ থাকছে না। অপরদিকে সদর উপজেলায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উপযুক্ত জায়গাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে জটিলতা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বিশেষ হস্তক্ষেপ আশা করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলায় একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জ জেলাবাসীর পাঁচটি দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল- হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ স্থাপন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা বাস্তবায়ন, বাল্লা স্থলবন্দর স্থাপন ও হবিগঞ্জ-সুনামগঞ্জ (ভায়া বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ-শাল্লা-দিরাই) আঞ্চলিক মহসড়ক নির্মাণ। একনেক সভায় ইতোমধ্যে এসব প্রকল্প পাস হয়েছে। 

গত ১০ সেপ্টেম্বর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০২০ জাতীয় সংসদে পাস হয়। তবে সংসদে পাস হওয়া হবিগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেড আব্দুল মজিদ খান ও প্রয়াত সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নে অবস্থিত নাগুড়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব জমি ও খাস জমিকে কাজে লাগিয়ে কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রস্তাব রেখেছিলেন। কিন্তু বিদ্যমান আইনে ‘হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ কথাটি সংযুক্ত করে আইন পাস করায় বানিয়াচংয়ের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সবুজ চত্বর ও খাস জমি কাজে লাগানোর সুযোগ থাকছে না। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়েছে। বিল পাস হওয়ার পর স্থানীয়রা আশার আলো দেখলেও বর্তমানে স্থান নির্ধারণে জটিলতা তৈরি হওয়ায় হতাশা শুরু হয়েছে তাদের মধ্যে। এই জটিলতা নিরসনে তারা প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানও। গতকাল সোমবার সকালে নিজের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে হবিগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণে জটিলতা নিরসন করতে না পারলে বিকল্প স্থানে হলে ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রায় ২ থেকে ৩ শত একর ভূমি সহজলভ্য হবে না। তাই বিদ্যমান আইনটি সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করতে হলে এখন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বিশেষ সুবিবেচনা প্রয়োজন।’

উল্লেখ্য, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইনটি গত বছরের গত ২৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে বিলটি গত ২৩ জুন সংসদে উত্থাপিত হলে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। স্থায়ী কমিটি ৭ সেপ্টেম্বর বিলটির প্রতিবেদন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে। বিলটিতে ৫৪টি ধারা হয়েছে। এতে সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রবর্তন, সংজ্ঞা ছাড়াও আচার্য, উপাচার্যের দায়িত্ব কর্তব্য, ট্রেজারার, সিন্ডিকেট, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটি সম্পর্কিত বিধান আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদ থাকবে বলে বিলে বিধান রাখা হয়েছে। অনুষদগুলো হলো- কৃষি অনুষদ, মাৎস্য অনুষদ, প্রাণি চিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ, বিজ্ঞান অনুষদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ।

কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে কৃষি বিজ্ঞানে উন্নত শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রচলিত অন্যান্য বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ দেশে কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে হবিগঞ্জ জেলায় এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিএ-১৩