প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজ হয়নি অর্ধেকও

শামীম আহমদ, বালাগঞ্জ


অক্টোবর ০৫, ২০২০
১২:০৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৫, ২০২০
১২:০৫ পূর্বাহ্ন



প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজ হয়নি অর্ধেকও
সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়ক

সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ ও মেরামত কাজে ধীরগতিতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। কয়েক বছর ধরে চরম ভগ্নদশায় থাকা এই সড়কটির সংস্কার কাজ দেড় বছর আগে শুরু হলেও সড়কে দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। সড়কের স্থানে স্থানে খালে পরিণত হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। কখনও গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, কখনও আটকা পড়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা গেছে।

একদিকে ধীরগতিতে চলছে সংস্কার কাজ, আর অন্যদিকে খানাখন্দ আর কাদা-জলে একাকার হওয়ায় দীর্ঘ এ সড়কটিতে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বালাগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জসহ ৪টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজের খুশিমতো কাজ করলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। কাজ শেষ হতে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে- এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি এবং সড়ক সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হয়েছে। বাস্তবে বাজার এলাকার কিছু জায়গায় আরসিসি ঢালাই ছাড়া তেমন কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। ভগ্নদশার কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অটোরিকশাই এখন ভরসা। যানবাহনগুলো খানাখন্দে উল্টে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ভোগের সঙ্গে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়াও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ ও মেরামত কাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ। সড়কটি ১২ ফুট থেকে উন্নীত করে ১৮ ফুট প্রশস্তকরণসহ সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন (জেবি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রশস্তকরণসহ সংস্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি বেসসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাতকারে সওজ সিলেট অঞ্চলের প্রকৌশলী তুষার কান্তি দাস বলেছিলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে। সে অনুযায়ী গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালক্ষেপণ করায় কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙা সড়কের কারণে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। স্থানে স্থানে গর্তে জলাবদ্ধ পানিতে আটকা পড়ছে বিভিন্ন যানবাহন। যাত্রীদের অভিযোগ, সড়কটি সংস্কারের নামে আরও দুর্ভোগ বাড়ছে। শুকনো মৌসুমে ধুলা আর বর্ষায় কাদা-জল তাদের নিত্যসঙ্গী।

অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন আজিজপুর শাখার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আওলাদ মিয়া বলেন, 'সড়কটি গাড়ি চলাচলের মোটেও উপযোগী নয়। ভাঙা সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। স্থানে স্থানে গর্তে আটকা পড়তে হয়। সময়ের তো কোনো হিসেব নেই, আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে গাড়ি মেরামতে।'

বালাগঞ্জ উপজেলার সারসপুর গ্রামের বাসিন্দা সদরুল হাসান নবীন বলেন, 'সড়কটির সংস্কার কাজ না করে এভাবে ফেলে রাখার মানেটা কী? যত ভোগান্তি যাত্রীদের, তাতে যেন কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।'

গহরপুর ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী গুলজার আহমদ জাকারিয়া ও আজিজপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাজন আহমদ বলেন, 'সড়কের গর্তগুলো ডোবায় পরিণত হয়েছে। কয়েকটি বাজার এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক। আর কতকাল দুর্ভোগ পোহাতে হবে তা আল্লাহই জানেন। দেড় বছর আগে কাজ শুরু হলেও দৃশ্যত তেমন কাজ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজের খেয়াল-খুশিমতো কাজ করলেও তা দেখার কেউ নেই।'

এ ব্যাপারে সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়ক প্রসস্তকরণ ও সংস্কার প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ইমরান হোসেন বলেন, 'ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশের বেশি কাজ হয়েছে। করোনা এবং পাথর সংকটের কারণে কাজের গতি কিছুটা কম ছিল। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।'

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, 'সড়কের সংস্কার কাজ চলমান থাকলে মানুষের কিছুটা ভোগান্তি হবে। কোভিড পরিস্থিতি ও পর্যাপ্ত পাথর না পাওয়ার কারণে কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।'

 

এসএ/আরআর-১০