গোলাপগঞ্জের দেওয়ান সড়ক : দুর্ভোগের ১০ কিলোমিটার

ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ


অক্টোবর ০৭, ২০২০
০২:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৭, ২০২০
০২:১২ পূর্বাহ্ন



গোলাপগঞ্জের দেওয়ান সড়ক : দুর্ভোগের ১০ কিলোমিটার

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ১০ কিলোমিটার দেওয়ান সড়কের (ঢাকাদক্ষিণ -হেতিমগঞ্জ) বিভিন্ন স্থানে বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহনের চালকরাও এ পথে যেতে চান না। ফলে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়িত পথচারী ও যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গোলাপগঞ্জের বৃহত্তম অংশসহ বিয়ানীবাজার ও মৌলভীবাজারের বড়লেখার মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগও আশা ব্যক্ত করে বলছে রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেওয়ান সড়কটি হেতিমগঞ্জ ও ঢাকাদক্ষিণের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে। এই সড়ক দিয়ে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ, লক্ষ্মীপাশা, বুধবারিবাজার, ভাদেশ্বর, শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়া বিয়ানীবাজার উপজেলা ও বড়লেখা উপজেলার মানুষও এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। সড়কটি বেহাল হওয়ায় গাড়িগুলোকে এখন গোলাপগঞ্জ হয়ে সিলেটে যেতে হচ্ছে। এতে যেমন দীর্ঘপথ ঘুরে যেতে হয়, তেমনি আবার গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে যানজটের মধ্যে পড়তে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া ও পাথর বেরিয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। সড়কটির এ বেহাল অবস্থায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারেন না তারা। কখনও কখনও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয় তাদের। বিশেষ করে রোগীবাহী গাড়ি এ সড়ক দিয়ে যেতে পারে না।  এতে করে ক্রমশই বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এ দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত যানবাহন, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন যাত্রীরা।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বছর আগে এ সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর মেরামত না করায় সড়কের অনেক স্থানে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা যাতায়াতকারী মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের  হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন যাতায়াত করেন এ রাস্তা দিয়ে। তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

শিক্ষার্থী লিপি আক্তার বলেন, ‘রাস্তার বেহাল দশার কারণে চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হয়।'

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক কামরুল হক বলেন, 'রাস্তায় অনেক খানাখন্দ থাকায় যাত্রীদের নিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। সড়কটি গাড়ি চলাচল ও মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। খানা-খন্দে গাড়ি উল্টে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যা উপার্জন করি তার বড় একটি অংশ গাড়ি মেরামতে ব্যয় করতে হয়। গত ৩ বছর ধরে সড়কের এই দূরবস্থা।'

লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইসমাইল আলী বলেন, 'রাস্তা ভাঙাচোরা থাকার কারণে আমাদের যাতায়াত করতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ রাস্তাটি প্রায় তিন বছর ধরে সংস্কার করা হয়নি। হাজারও মানুষকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে দ্রুত এ রাস্তা সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।'

গোলাপগঞ্জ বিআরডিবি'র ভাইস চেয়ারম্যান সমাজসেবক আক্তার হোসেন লাল মিয়া বলেন, তিন বছর আগে এই রাস্তার সংস্কার কাজ হয়েছিল। কিন্ত ছয় মাস না যেতেই রাস্তা বেহাল হয়ে যায়। রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে চলাচলে আমাদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে ২০ মিনিট। ভাড়াও দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সুস্থ-সবল মানুষেরও নাভিশ্বাস ওঠে। অনেক সময় গাড়িতে করে এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। রাস্তার বেহাল দশার কারণে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চরম কষ্টে প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে খুব দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করা প্রয়োজন।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাছান সিলেট মিররকে বলেন, 'সড়কটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জরাজীর্ণ এই রাস্তাটির সংস্কারের জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি ৩/৪ মাসের ভেতরে একনেকে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর রাস্তাটির সংস্কার কাজের প্রক্রিয়া শুরু হবে।'

 

এফএম/আরআর-১০