অভিযানে শিথিলতা, নগরে চলছে ব্যাটারিচালিত ৪ সহস্রাধিক অবৈধ রিকশা

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ০৭, ২০২০
০৪:০৭ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৭, ২০২০
০৪:০৯ অপরাহ্ন



অভিযানে শিথিলতা, নগরে চলছে ব্যাটারিচালিত ৪ সহস্রাধিক অবৈধ রিকশা

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিলেট নগরে আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা। অভিযানে শিথিলতার কারণে প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি অন্তত চার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা রাজপথ দখল করে নিয়েছে। এসব রিকশার কারণে নিত্যদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটও। 

করোনা সংক্রমণের আগে সিলেটে ব্যাটরিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার ছিল। ফলে প্রধান সড়ক ছেড়ে এসব রিকশা চলতে থাকে নগরের বিভিন্ন অলি-গলিতে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরু হলে আবারও প্রধান সড়কে ফিরে আসে এসব রিকশা। করোনা পরিস্থিতিতে এসব রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে কিছুটা শিথিলতা দেখায় সিলেটের প্রশাসন। আর সেই সুযোগেই তারা ফিরেছে নগরের প্রধান সড়কগুলোতে। 

সোমবার সরেজমিন নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, রিকাবীবাজার, লামাবাজার, ওসমানী মেডিকেল রোড, নয়াসড়ক, জেলরোড, সোবহানীঘাট, উপশহর, সুবিদবাজার, নাইওরপুল, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ ঘুরে প্রতিটি সড়কেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেখা যায়।

রিকশা খুব হালকা যানবাহন। গতিসম্পন্ন মোটর লাগানো হলেও নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রেক সাধারণ রিকশার মতোই। তাই জোরে এসে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ব্যাটারি লাগিয়ে জোরে চালানোর কারণে ভারসাম্য হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে ব্যাটারিচালিত রিকশায়। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত রিকশা চলাচল করায় নগরে যানজটও বাড়ছে। এসব রিকশার ব্যাটারি রিচার্জ করতে গিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎও অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

বন্দরবাজারের ব্যবসায়ী রেজাউর রহমান রানা বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ এই রিকশায় গতি বেশি থাকলেও ব্রেক সাধারণ রিকশারই। তাই গতি বেড়ে যাওয়ার পর অনেক সময় চালক রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।’

সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখা জানিয়েছে, নগরে প্রায় ২০ হাজার বৈধ রিকশা রয়েছে। কিন্তু অবৈধ রিকশার সংখ্যা তাদের জানা নেই। তবে অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, বৈধ রিকশার বাইরে সিলেটে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার অবৈধ রিকশা রয়েছে। এসব অবৈধ রিকশার মধ্যে অন্তত ৪ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। উচ্চ আদালত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের আদেশ দিলেও আদালতের আদেশ পালনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব শুধু সিটি করপোরেশনের নয়। পুলিশই অবৈধ রিকশা জব্দ করার কথা।’ এরপরও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের স্বার্থে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও মাঝেমধ্যে অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সিলেট নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান পাঠানটুলা এলাকার মতিন মিয়া। কিন্তু তিনি রিকশার মালিক নন। ভাড়া বাবদ প্রতিদিন রিকশার মালিককে নির্ধারিত টাকা দিতে হয়। মতিন মিয়া সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনার আগে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো নিয়ে বেশ কড়াকড়ি ছিল। আমরা কিছু এলাকার গলির ভেতরে এসব রিকশা চালাতাম। গভীর রাতে মাঝেমধ্যে প্রধান সড়কে আসতে পারতাম। তবে করোনা আসার পর থেকে এখন খুব একটা কড়াকড়ি নেই। দিনের বেলাতে প্রায়ই মূল সড়কে রিকশা চালাই।’

এই রিকশা চালাতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয় জানিয়ে মতিন মিয়া বলেন, ‘পর্দা দিয়ে মোটর ঢেকে রাখতে হয়। এছাড়া পুলিশের সামনে গতি কমিয়ে সাধারণ রিকশার মতো চালাতে হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার সিলেট মিররকে বলেন, ‘কোনো সময়ই ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে শিথিলতা দেখানো হয়নি। তবে করোনার সময় পুলিশ অন্যান্য কাজে বেশি সম্পৃক্ত ছিল বলে কড়াকড়িভাবে এসব অভিযান করা হয়নি। তবে এখন আবারও অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

বিএ-১৩