ওসমানীনগর প্রতিনিধি
অক্টোবর ০৯, ২০২০
০১:১৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ০৯, ২০২০
০১:১৮ পূর্বাহ্ন
‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়’- বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের সুরে আজ বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে কুশিয়ারা নদীর শেরপুর এলাকার অংশে এমনই ঝিলমিল করেছিল একাধিক বাইচের নৌকা। নৌকার মাঝিদের কন্ঠে জেগে উঠেছিল গ্রামবাংলার চিরন্তন আঞ্চলিক সারি গান। ঢাক-ঢোল আর করতালের তালে তালে সুরের মায়ায় ডুব দিয়েছিলেন হাজারও উৎসুক দর্শক। সবমিলিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেরপুর এলাকায় বিরাজ করছিল অন্যরকম দৃশ্য। গ্রামের নারী দর্শকদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষনীয়।
মৌলভীবাজার সদর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম-হামরকোনা যুবসমাজের উদ্যোগে এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন থেকে সিলেটের ওসমানীনগর, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে চলছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামবাংলার অতি পরিচিত সংস্কৃতি এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা নানা কারণে আজ বিলীন হতে চলেছে। আগে প্রতিবছর শেরপুরে নানা সংগঠনের ব্যানারে এমন একাধিক বাইচের আয়োজন হলেও গত কয়েকবছর ধরে শরৎ মৌসুমে একটিমাত্র বাইচের আয়োজন করা হচ্ছে। তাই নৌকা বাইচের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকেই এলাকার লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাইচ উপভোগ করতে আমন্ত্রণ জানান। তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আত্মীয়-স্বজনরা আগের দিন থেকে স্থানীয়দের বাড়িতে এসে অবস্থান করেন। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে এই এলাকা পরিণত হয় মিলনমেলায়।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়া নৌকা বাইচ দেখতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত লোকজন প্রায় শতাধিক ছোট-ছোট নৌকা নিয়ে নদীতে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। নদীর পাড়ে এসব নৌকার বেষ্টনী দর্শনার্থীদের আলাদা আনন্দ যোগায়। এসব নৌকায় সকল বয়সের দর্শক বসে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। এছাড়া নিজের নৌকা না থাকায় নদীর পাড়ে ও গাছের ডালে বসে নৌকা বাইচ উপভোগ করে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অনেক দর্শক।
এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় মোট ১৪টি নৌকা অংশ গ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার (কালাইনজোড়া) নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার (সোনার বাংলা) নৌকা এবং ৩য় স্থান অধিকার করে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার (বল্লবপুর) নৌকা। প্রতিযোগিতায় ১ম পুরস্কার ছিল ১টি ফ্রিজ, ২য় পুরস্কার ছিল ১টি ২৪ ইঞ্চি টিভি ও ৩য় পুরস্কার ছিল ১৪ ইঞ্চি টিভি।
কুশিয়ারা নদীতে নৌকা বাইচে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ নেতা অলিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও আশরাফ আলী খানের পরিচলনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ, মৌলভীবাজার উপজেলার চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, খলিলপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান অরবিন্দু পৌদ্দার বাচ্চু প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে প্রধান অতিথি বিজয়ী নৌকার মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
ইউডি/আরআর-১৪
