পুলিশের চাকরি যেন আলাদিনের চেরাগ!

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১৫, ২০২০
০৪:১৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৫, ২০২০
০৪:১৪ পূর্বাহ্ন



পুলিশের চাকরি যেন আলাদিনের চেরাগ!

আকবরের আলিশান বাড়ি

পুলিশের এসআই পদে যোগ দেওয়ার পর হাতে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্জ আকবর হোসেন! এই চাকরি পাওয়ার পর তিনি পুরোনো বাড়ি ভেঙে নির্মাণ করেন আলিশান বাড়ি। পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আকবরের আলিশান বাড়ির ছবি। পুলিশের উপপরিদর্শকের চাকরি করে কীভাবে এত দ্রুত তিনি ওই বাড়ি তৈরি করলেন, সেটি নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আকবরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বগৈর গ্রামে। বাবা জাফর আলী ভুইয়া স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয় জাফর আলী ভুইয়ার বিরুদ্ধে। জেলও খাটেন তিনি। এরপর স্কুল থেকে চাকরিচ্যুত হন। মামলায় জড়ানোর পর সহায়-সম্পদ যা ছিল তা সবই খুইয়েছেন জাফর আলী। 

পুলিশে চাকরির বদৌলতে বাবার খোয়ানো সব সম্পদ ফিরে এসেছে আকবরের হাত ধরে।

২০০৩ সালে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০০৫ সালে উপজেলার ফিরোজ মিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আকবর। ২০০৭ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি নেন তিনি। কয়েক বছর চাকরি করার পর উপপরিদর্শক (এসআই) পদে চাকরির জন্য পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসআই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে আকবর ও তার পরিবারের ভাগ্য। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় আকবর। পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর নিজ গ্রামে বাড়ি ও জায়গা-জমিসহ অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পুরোনো ঘর ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে আলিশান বাড়ি। ইতোমধ্যে বাড়ির প্রথম তলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে আধুনিক ফটক তৈরির কাজ। 

যদিও পরিবারের লোকজন বলেছেন, তার বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, জাফর মাস্টার পেনশনের টাকা পান প্রায় ১০ বছর আগে। ওই টাকায় এক ছেলেকে তিনি সিঙ্গাপুর পাঠান। মূলতঃ আকবরের মাধ্যমেই দিন বদলাতে শুরু করে পরিবারটির।  

সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় এখন নিজ গ্রামেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আকবর। আশুগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য বন্দরবাজার ফাঁড়ির ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করে আকবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। 

বগৈর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পুলিশে চাকরি হওয়ার পরই অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন আকবর। তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং আশুগঞ্জের মানুষের জন্য কলঙ্ক। আশুগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য বন্দরবাজার ফাঁড়ির ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করে আকবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া অনেকে পুলিশ কর্মকর্তা আকবর ও তার পরিবারের অঢেল সম্পদের উৎস অনুসন্ধানেরও দাবি জানিয়েছেন। 

পুলিশ কর্মকর্তা আকবরের ছোট ভাই আরিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ভাই এ ধরনের কাজ করতে পারে না। আমরাও চাই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমার বিশ্বাস, ভাই টাকার জন্য কাউকে মারতে পারে না।’ 

আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি বলেন, ‘আকবর যে ঘটনা ঘটিয়েছেন- সেটি পুরো আশুগঞ্জের জন্য লজ্জার। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আকবর যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

উল্লেখ্য, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নগরের নেহারীপাড়ার রায়হান আহমদের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। এ ঘটনায় পুলিশের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার ও ৩ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সিলেটসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সংগঠন। 

বিএ-০২