নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২২, ২০২০
০৩:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ২২, ২০২০
০৩:৪৫ অপরাহ্ন
# সিলেট জেলায় ৫৮৪ মণ্ডপে পূজা আয়োজন
# মন্দির বন্ধ হবে রাত নয়টার মধ্যে
# হবে না প্রতিমা শোভাযাত্রা
সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে আজ। আজ বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২৯ মিনিটের ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) সিলেটের পূজামণ্ডপগুলোতে দেবী দুর্গার বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
করোনা আতঙ্কের মধ্যেই এবার দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। মাতৃবন্দনাও হবে মহামারীর দুর্যোগ মাথায় নিয়ে। তাই এবার দুর্গোৎসবকে উৎসব না বলে ‘দুর্গাপূজা’ বলা হচ্ছে।
শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে বোধন ও বন্দনা পূজার মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙানো হয়। মণ্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। সকাল ৯টা ২৯ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচদিনের দুর্গাপূজার মূল পর্ব। সকাল থেকে চণ্ডীপাঠে মুখরিত হয়ে উঠে সকল মণ্ডপ এলাকা। আগামীকাল শুক্রবার মহাসপ্তমী, শনিবার মহাঅষ্টমী, কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা ও ২৫ অক্টোবর মহানবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা।
পঞ্জিকা মতে এবার দেবী দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমনের অর্থ মড়ক। ফলে, পূজার বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারীর পরিস্থিতি বজায় থাকার আশংকা রয়েছে। তবে, এবার মায়ের গমন গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। আবার রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাত্রার আগে শ্রীরামচন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে। এ জন্য দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়। প্রতিবছর পিতৃপক্ষের শেষে দুর্গাপূজা আয়োজন করা হলেও এবার দুর্গাপূজা আয়োজন করা হচ্ছে মহালয়ার ৩৫ দিন পর। এ বছরের দুর্গোৎসব শুরুর মাসটি (আশ্বিন) ‘মল মাস’ তথা ‘অশুভ মাস’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় হেমন্ত ঋতুর কার্তিক মাসে এই পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
হিন্দু পঞ্জিকা পরিচালিত হয় সূর্য ও চন্দ্র মাসের গণনার ওপর ভিত্তি করে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, একটি সূর্যবর্ষ ৩৬৫ দিন ও প্রায় ৬ ঘণ্টার হয়ে থাকে। আবার চন্দ্রবর্ষ ৩৫৪ দিনের হয়। এই দুইয়ের মধ্যে ১১ দিনের পার্থক্য থাকে। তিন বছরে এটি এক মাসের সমান হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত মাসের পার্থক্য দূর করার জন্য প্রতি তিন বছরে একবার অতিরিক্ত মাস আসে। একেই অধিকমাস বলা হয়। এ বছর আশ্বিন মাস অধিকমাস। অধিকমাসে সকল পবিত্র কার্যবর্জিত। এই পুরো মাসে কোনো সূর্য সংক্রান্তি না থাকায় এই মাসটি মলিন হয়ে যায় বলে মনে করা হয়। যার কারণে একে মলমাসও বলা হয়। আবার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী একই মাসে দুটি অমাবস্যাকেও মলমাসের অন্যতম কারণ মনে করা হয়। দুর্গাপূজা পিছিয়ে যাওয়ায় এবার পিছিয়ে যাবে লক্ষীপূজা ও কালীপূজাও। সবশেষ ১৯৮২ সালে এমনটা ঘটেছিল।
আনন্দময়ী-দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার আগমন বার্তায় আনন্দমুখর হয়ে ওঠে বাঙালির মন। কিন্তু এবারের দুর্গোৎসব বাঙালির কাছে সম্পূর্ণ অচেনা। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ভয়ঙ্কর ব্যাপ্তি অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে উৎসবের আনন্দ। সরকারি বিধিনিষেধ আর সামাজিক দূরত্বের ঘেরাটোপে বাঙালির যেন মন খারাপের পালা। পুজো হবে ঠিকই, কিন্তু সীমাহীন আনন্দ আর উৎসবের মাতামাতি থাকবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।
এবার সিলেট জেলায় ৫৮৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্বাস্থবিধি মেনে এবার পূজা আয়োজন করা হবে। পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৯টার মধ্যে মন্দিরের প্রবেশদ্বার বন্ধ করতে হবে। অন্যবারের মতো প্রতিমা বিসর্জনের দিন আয়োজন করা যাবে না শোভাযাত্রাও।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় পারিবারিক ও সর্বজনীন মিলিয়ে ৫২০টি এবং সিলেট মহানগরে ৬৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬০৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কমেছে ২৪টি।
করোনাভাইরাস দুর্যোগে সবোর্চ্চ সতর্কতায় এবারের পূজা উদযাপন করা হবে। পূজা মণ্ডপে অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে না। পূজা উদযাপন পরিষদ, সিলেট জেলা ও মহানগরের তথ্য মতে, চলতি বছর সিলেট জেলা ও মহানগরে ৫৪০টি মণ্ডপে সর্বজনীন পূজা উদযাপন করা হবে। আর ৪৪টি মণ্ডপে পারিবারিকভাবে পূজা উদযাপন করা হবে।
পরিষদের সূত্রমতে, সিলেট সদর উপজেলায় সর্বজনীন ও পারিবারিক মিলিয়ে ৫৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দক্ষিণ সুরমায় ২১টি, গোলাপগঞ্জে ৫৮টি, বালাগঞ্জে ২৯টি, কানাইঘাটে ৩৫টি, জৈন্তাপুরে ২২টি, বিশ্বনাথে ২৬টি, গোয়াইনঘাটে ৩৯টি, জকিগঞ্জে ৮৪টি, বিয়ানীবাজারে ৫১টি, কোম্পানীগঞ্জে ২৮টি, ফেঞ্জুগঞ্জে ৩৭টি এবং ওসমানীনগর উপজেলায় ৩৩টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ‘করোনাভাইরাস দুর্যোগে পূজা উদযাপনে আমরা সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। এই নীতিমালায় কীভাবে পূজা মণ্ডপে স্বাস্থবিধি নিশ্চিত করা হবে সেই বিষয়ে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমরা দুর্গোৎসব না বলে বলছি দুর্গাপূজা। এজন্য মণ্ডপে অতিরিক্ত সাউন্ড, আলোকসজ্জা, লাইটিং না করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া মণ্ডপে আসা পূজারি, দর্শনার্থীসহ সবাইকেই বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। রাত ৮টার পর মণ্ডপে আসতে পুণ্যার্থীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে প্রতিবার ভক্তদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকলেও এবার তা থাকছে না। প্রসাদ বিতরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে হাতে একটা ফল দেওয়া যেতে পারে।
মন্দিরে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে, মাস্ক ব্যবহার করে ভক্তরা অঞ্জলি দিতে পারবেন।
বিএ-০৭