কোম্পানীগঞ্জে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট

কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ


অক্টোবর ২৪, ২০২০
০৯:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৫, ২০২০
০৫:১৩ পূর্বাহ্ন



কোম্পানীগঞ্জে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ধলাই নদীর অব্যাহত ভাঙণে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সর্বগ্রাসী ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মসজিদও। বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন আশপাশের বাড়িতে অথবা কোনো ঝুপড়ি ঘরে। শেষ অবলম্বন নিজের একমাত্র বসতঘর হারিয়ে অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। সবমিলিয়ে অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। এখনও পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগের দেখা পাননি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ২ নম্বর পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চানঁপুর ও ঢালারপাড় গ্রামের বসতিগুলো তীব্র নদীভাঙনের মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে চাঁনপুর ও ঢালারপাড় গ্রামের উত্তরপাশের কয়েকটি বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং কয়েকটি বসতি অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় আতঙ্ক নিয়েই এসব ঘরে বসবাস করছেন ভুক্তভোগীরা।

ঢালারপাড় গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র জুয়েল মিয়া বলেন, 'বাবা ও ভাইকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে একটি ঘর করেছিলাম বছরখানেক আগে। সেই ঘর কিছুদিন আগে বন্যায় জমিসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন মা, বাবা, ভাই, বোনসহ স্বজনদের বাড়িতে অসহায় অবস্থায় বসবাস করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'ঢালারপাড় ও চাঁনপুর গ্রামের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ মসজিদ ভবন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় মসজিদ ভবনসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে ভাঙনে কয়েকটি বাড়িঘর ও শতাধিক গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে।'

স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমগীর আলম বলেন, 'চলতি বছর ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে গ্রামবাসী কয়েকবছর ধরে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু আজ অবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।'

স্থানীয় বাসিন্দা রাজু আহমদ জানান, গ্রামগুলোতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে। এরই মধ্যে ধলাই নদী তীরবর্তী পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকে বসতি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। 

পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের ঢালারপাড় গ্রামের সফর মিয়া জানান, ধলাই নদীতে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে দিনে-রাতে ড্রেজিং চলছে। এতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে এই ইউনিয়নের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামগুলো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো বাবুল মিয়া বলেন, 'নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হওয়ায় উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। তারপরও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।'

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য বলেন, 'নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাঙনকবলিত গ্রামগুলোতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।'

 

এমকে/আরআর-০৪