রায়হান হত্যাকাণ্ডে আমি লজ্জিত

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ২৭, ২০২০
১১:৫১ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৭, ২০২০
১১:৫১ অপরাহ্ন



রায়হান হত্যাকাণ্ডে আমি লজ্জিত
রায়হানের বাড়িতে এসএমপির নতুন কমিশনার

সিলেটে রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনভিপ্রেত, অপ্রত্যাশিত। একজন অপরাধী সে যে বাহিনীরই হোক না কেন সে অপরাধী। যেহেতু পুলিশ এ ঘটনায় অভিযুক্ত একারণে আমি লজ্জিত। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাতে রায়হানের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন সিলেট মহানগর পুলিশের নতুন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটে তিনি রায়হানের বাড়িতে এসে পৌঁছান সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ। এসেই তিনি রায়হানের মা সালমা বেগম ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিমানযোগে তিনি সিলেট এসে পৌছান। সিলেটে এসে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের দাবি মূল আসামীকে গ্রেপ্তার করা। পুলিশসহ সবগুলো বাহিনী এ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমরা জড়িত সকলকে আমরা গ্রেপ্তার করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কঠোর নির্দেশনা আছে এ ঘটনায় সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এই এসাইনমেন্ট নিয়েই আমি সিলেটে এসেছি।’

এসএমপি বারবার বিতর্কে জড়াচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজস্ব একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি। এছাড়াও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি সকল কিছু গুছানো সম্ভব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপির নির্দেশনা রয়েছে সিলেটে কোনো অনৈতিক কর্মকান্ড যাতে না ঘটে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসআই আকবরকে কেউ যদি মদদ দিয়ে থাকেন তাকেও শনাক্ত করা হবে। সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারাও মামলার আসামি হবেন।’

আকবরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পলাতক এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট কাজ করছে।আকবরকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু স্ট্র্যাটিজি আছে, যেহেতু আসামি পলাতক তাই এখনি তা বলতে পারছি না। জনসাধারণের মধ্যে কেউ আকবরের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন বা কেউ গ্রেপ্তার করেন তাহলে দ্রæত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’

উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর শনিবার মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবার।পরদিন রবিবার সকালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখের তত্ত্বাবধানে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। 

বহিষ্কারের পরপর গত ১৩ অক্টোবর থেকে লাপাত্তা হয়ে যান বরখাস্তকৃত এসআই আকবর। এরপরই পুলিশ কমিশনারের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই গত ২২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলী করা হয়। একই আদেশে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপান নিশারুল আরিফ।

এসএমপির নতুন কমিশনার নিশারুল আরিফ ২০১৯ সালের অক্টোবরে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি থাকাকালীন সময়ে ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। এরপর ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিশারুল আরিফকে এসপিবিএনের উপ-মহাপরিদর্শক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

এনএইচ/বিএ-১৭