ওসমানীনগর প্রতিনিধি
নভেম্বর ০৫, ২০২০
১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ০৫, ২০২০
১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের সিকন্দরপুর (মাইজগাঁও) গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী জমশেদ আলী লেফাস প্রায় ১ যুগ পূর্বে নিজ এলাকায় কিছু করার জন্য দেশে আসেন। মফস্বলে তেমন কিছু করার সুযোগ না থাকায় বড় পরিসরে মাছের খামার গড়ার উদ্যোগে নেন তিনি। সে লক্ষ্যে কয়েক ধাপে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বর্তমানে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে নাজেহাল হচ্ছেন একের পর এক মামলায়। ইতোমধ্যে লুট হয়েছে তার খামারের মাছ, মাঠের ধান ও একাধিক ফসলি গাছ।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে আব্দুল্লাহপুরে পারিবারিক সম্পত্তিতে ফিশারি বা মাছের খামার করেন জমশেদ আলী লেফাস। মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতনে ফিশারি দেখাশোনার দ্বায়িত্ব দেন চাচাতো ভাই রানু মিয়া ও জানু মিয়াকে। পর্যায়ক্রমে ফিশারিতে আরও ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। পরবর্তীতে জমশেদ আলী অসুস্থ হয়ে পড়লে রানু মিয়া ও জানু মিয়া গত ৩ বছর ফিশারি থেকে হিসাব না দিয়ে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সালিশের আয়োজন করা হলে রানু ও জানু হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
২০১৯ সালে জমসেদ আলী নতুন করে ফিশাতিতে আরও ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এদিকে রানু ও জানু মিয়া টাকার হিসাব না দিয়ে নানা ধরণের চক্রান্ত করতে থাকেন। তারা চলতি বছরের ১৪ মে জমসেদ মিয়ার মালিকানাধীন জমির পাকা ধান এবং খামারের সীমানায় লাগানো মূল্যবান গাছ কেটে নেন। এসব ঘটনায় রানু মিয়া ও জানু মিয়াসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার পর তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেলেও পুলিশ নন এফআইআর প্রসিকিউশন করেছে বলে অভিযোগ করেন জমসেদ আলী। এরই মধ্যে রানু, জানু ও তাদের সহযোগীরা ফিশারির কর্মচারীদের জিম্মি করে প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যান। এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৪ জুলাই রানু ও জানুসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে ওই মামলাটি তদন্তের জন্য ওসমানীনগর থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। এই সুযোগে ২০১২ সালের ১২ আগস্ট নিখোঁজ হওয়া রানু ও জানুর ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন হামদুকে গুম করা হয়েছে মর্মে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় জমসেদ আলী এবং তার দুই প্রবাসী ভাইসহ ৪ জনকে আসামি করা হয়, যা বর্তমানে তদন্ত করছে পিবিআই।
এ ব্যাপারে জমশেদ আলী লেফাস বলেন, 'আমার চাচাতো ভাইদের পরামর্শে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ফিশারি করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার সবকিছু লুট করে এখন উল্টো সাজানো গুমের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
আর নিখোঁজ হামদু মিয়ার স্ত্রী বলেন, 'আমার স্বামীকে কেউ গুম করেনি। তিনি পূর্ব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। গত ৮ বছর আগে নিখোঁজ হওয়ার পর আর ফিরে আসেননি।'
অভিযুক্ত রানু মিয়া ও জানু মিয়া বলেন, 'চাচাতো ভাই লেফাস মিয়া আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতের পাঁয়তারায় আমার ভাইকে গুম করেছেন। আমাদের জায়গা লিজ নিয়ে ফিশারি করে এখন আমাদের লিজের টাকা না দিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।'
এ প্রসঙ্গে উমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, 'এটা তাদের পারিবারিক বিরোধ। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি। এরপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টায় রয়েছি।'
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, 'ওই প্রবাসী তাদের চাচাতো ভাইদের ফিশারি করে দিয়েছিলেন বলে জেনেছি। পরবর্তীতে টাকা-পয়সা ও পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে দায়েরকৃত একটি মামলা থানা পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।'
ইউডি/আরআর-০৮