করোনার নতুন ধরনে ১৭ পরিবর্তন, দুশ্চিন্তায় গবেষকরা

সিলেট মিরর ডেস্ক


ডিসেম্বর ২১, ২০২০
১০:০৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০২০
০৪:৪০ পূর্বাহ্ন



করোনার নতুন ধরনে ১৭ পরিবর্তন, দুশ্চিন্তায় গবেষকরা

মহামারি করোনাভাইরাস এর নতুন একটি ধরন (স্ট্রেইন) শনাক্ত হয়েছে ব্রিটেনে। দেশটির গবেষকরা করোনার নতুন এ ধরণ সম্পর্কে বলেছেন, ‘এ ভাইরাসটি অনেক সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। নতুন এই করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে।’ ভাইরাসটি নিয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেকা গেছে এতে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে।  ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন এসেছে।

করোনার নতুন এই ধরনের কারণে ব্রিটিশ সরকার শুক্রবার আবারও কঠোর লকডাউন জারি করেছে। এটি ব্রিটেন সরকারের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। খবর বিবিসি, এবিসি নিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার

করোনার এই নতুন ধরনকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘এসএআরএস-সিওভি-২।’ এটি ১৪ বার শরীরে পরিবর্তন হয়। মানব শরীরের যেসব কোষ ভাইরাস প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে সেসব কোষকে আক্রমণ করে করোনার এই নতুন ধরন। করোনার যেসব ধরন পাওয়া গেছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। 

মূলত তিনটি কারণে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ১. এটি ভাইরাসের অন্য সংস্করণগুলোকে প্রতিস্থাপিত করছে। ২. এটির বিভাজন বা রূপান্তর ভাইরাসের কিছু অংশে পরিবর্তন আনে, যা গুরুত্বপূর্ণ। ৩. এসব বিভাজনের মধ্যে বেশ কিছু ল্যাবে পরীক্ষার পর দেখা গেছে এগুলো মানুষের দেহের কোষকে সংক্রমিত করার ভাইরাসের যে সক্ষমতা তা বাড়ায়। এসব বৈশিষ্ট্য ভাইরাসটিকে সহজে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা দেয়।

ভাইরাসটির নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রাথমিক একটি বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন এসেছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটির মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।

N501Y নামে চিহ্নিত একটি পরিবর্তনে স্পাইকের ওই জায়গায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর এসেছে। যা রিসেপ্টর-বাইন্ডিং ডোমেইন নামে পরিচিত। এর মাধ্যমেই ভাইরাসের স্পাইক মানুষের ত্বকের সঙ্গে প্রথম সংযোগ ঘটায়। যে কোনো ধরনের পরিবর্তন, যা এই ভাইরাসটিকে শরীরে সহজে প্রবেশ করতে সহায়তা করে, তা ভাইরাসটির জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। এটাকে আপাত গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন মনে করা হচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক জোনাথন বল বিবিসিকে বলেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য জানা যাচ্ছে সেগুলো পর্যাপ্ত নয় এবং এগুলো অনুযায়ী কোনো দৃঢ় মতে পৌঁছানোও সম্ভব নয় যে ভাইরাসটি আসলেই বিশালভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক জোনাথন বল বিবিসিকে বলেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য জানা যাচ্ছে সেগুলো পর্যাপ্ত নয় এবং এগুলো অনুযায়ী কোনো দৃঢ় মতে পৌঁছানোও সম্ভব নয় যে ভাইরাসটি আসলেই বিশালভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

সেপ্টেম্বর মাসে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি (স্ট্রেইন) শনাক্ত হয়। নভেম্বর মাসে লন্ডনের এক–চতুর্থাংশ বাসিন্দা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে সংক্রমিতের এই সংখ্যা বেড়ে দুই-তৃতীয়াংশ হয়। নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়াতেও করোনার নতুন এই ধরন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনার নতুন ধরনটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ নতুন বৈশিষ্টের এই ভাইরাসের কারণে ব্রিটেন থেকে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া ফ্রান্স বলেছে, যুক্তরাজ্য থেকে আগত লোকদের এবং মালবাহী যাত্রাও নিষিদ্ধ করবে, ‘যদি না ধরনটি টিকায় মোকাবিলায় আসে’।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হানকক বলেন, করোনার এই নতুন ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সরকারকে দ্রুত এবং বিস্তারিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে।

 

এএফ/০৩