বাধ্য হয়েই শরণার্থী হন নিহত বেলুচ অধিকারকর্মী

সিলেট মিরর ডেস্ক


ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন



বাধ্য হয়েই শরণার্থী হন নিহত বেলুচ অধিকারকর্মী

কানাডার টরন্টোয় শরণার্থী হিসেবে বসবাসরত বেলুচ অধিকারকর্মী কারিমা মেহরাব নিখোঁজ হওয়ার এক দিনের মাথায় তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। এটি হত্যাকাণ্ড এবং এতে পাকিস্তান সরকারের হাত থাকতে পারে—এমন অভিযোগে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তাঁর নিকটজনরা।

পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশের অন্যতম তরুণ অধিকারকর্মী কারিমা পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনীর কট্টর সমালোচক ছিলেন। বেলুচদের অধিকার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকায় একসময় কারিমা বেলুচ নামে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন তিনি। বর্তমানে কানাডায় বসবাসরত কারিমা গত রবিবার নিখোঁজ হন। পরদিন তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এখন পর্যন্ত পুলিশ তাঁর মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত না করলেও অধিকারগোষ্ঠীগুলোর দাবি, তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে তারা।

টরন্টো পুলিশ, কারিমার বন্ধু ও সহকর্মীরা জানান, রবিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় বে স্ট্রিটে ও কুইন্স কুয়ে ওয়েস্ট এলাকায় কারিমাকে শেষবারের মতো জীবিত অবস্থায় দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এটিকে এখনো হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছে না পুলিশ। এ ব্যাপারে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি।

তবে অন্য পাকিস্তানি অধিকারকর্মীরা, বিশেষ করে যাঁরা নির্বাসনে আছেন, তাঁরা মনে করছেন, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে এবং সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন গোষ্ঠী পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারিমা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে এই লড়াইয়ে জড়িত ছিলেন। আর এতে জড়িতদের গুম করে দেওয়ার অভিযোগ অনেক দিন ধরেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে রয়েছে। এ কারণেই কারিমার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মানতে নারাজ তাঁর স্বজন ও সহযোদ্ধারা। কারিমার ঘটনাই প্রথম নয়; বেলুচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সরব আরেক পাকিস্তানি অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক সাজিদ হুসেইন রহস্যজনকভাবে মারা যান চলতি বছরই। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে আহমেদ ওয়াকাস গোরায়য়া নামের আরেক নির্বাসিত পাকিস্তানি অধিকারকর্মী হামলার শিকার হন।

কারিমা ২০০৬ সালে বেলুচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বেলুচ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের আজাদ শাখায় (বিএসও-এ) যোগ দেন। ২০১৪ সালে ওই সংগঠনের প্রধান জাহিদ বেলুচ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন তিনি। ২০১৬ সালে তিনি বিবিসির ১০০ প্রেরণাদানকারী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় জায়গা করে নেন। পরে বারবার প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ায় তিনি কানাডায় চলে যান এবং ২০১৭ সালে সেখানে স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন।

কারিমার বন্ধু লতিফ বেলুচ বলেন, সম্প্রতি কারিমার স্বামী কারিমার কিছু হুমকি পাওয়ার কথা আমাকে জানিয়েছিলেন। কারিমা কিছু খুদে বার্তা পেয়েছিলেন, যেখানে লেখা ছিল যে বড়দিনে কারিমাকে কেউ একটি ‘উপহার’ বা এ ধরনের কিছু দিতে যাচ্ছে। এসব বার্তার স্ক্রিনশটও গণমাধ্যমের কাছে দিয়েছেন লতিফ।

৩৭ বছর বয়সী কারিমার মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে টুইট করেছে আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গত মঙ্গলবারের টুইটে তারা বলেছে, ‘টরন্টোয় অধিকারকর্মী কারিমা বেলুচের মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। অবশ্যই দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে বিষয়টির তদন্ত করতে হবে।’

 

সূত্র : আল-জাজিরা

 

এএফ/০১