ট্রাম্পকে পদচ্যুত করার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না মাইক পেন্স

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ১১, ২০২১
০২:০৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১১, ২০২১
০২:০৭ পূর্বাহ্ন



ট্রাম্পকে পদচ্যুত করার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না মাইক পেন্স

সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কাজে লাগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টার কথা একেবারে উড়িয়ে দেননি ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ট্রাম্প যদি আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠেন, তবে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনি এই বিকল্পটি হাতে রেখে দিতে চান বলে পেন্সের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। 

মাইক পেন্সের ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র জানিয়েছে, পেন্সের ঘনিষ্ঠমহল ও তাঁর উপদেষ্টাদের অনেকেই সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর প্রয়োগ এবং এমনকি অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এমন পদক্ষেপ নিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কিছু করে বসতে পারেন, যা গোটা জাতিকেই ঝুঁকিতে ফেলবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, গত বুধবার (৬ জানুয়ারি) ক্যাপিটল হিলে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মাইক পেন্সের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেন্সকে হত্যার হুমকি দিয়ে পোস্ট করা হয়েছে, যার কোনো নিন্দা জানাননি ট্রাম্প। ফলে পেন্সের প্রতি ট্রাম্প প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র জানিয়েছে, মাইক পেন্সের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমে ভীষণ হতাশ ও মর্মাহত পেন্স।

পেন্সকে উদ্দেশ্য করে সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া হত্যার হুমকির নিন্দা জানিয়ে ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, পেন্স চূড়ান্তভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমাহীনতার আভাস পেয়েছেন। এছাড়া দুটি সূত্র জানিয়েছে, পেন্সের ওপর ট্রাম্প বেজায় ক্ষুব্ধ এবং ট্রাম্পের ওপর পেন্স অসন্তুষ্ট ও ব্যথিত।

বুধবার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার অনুরোধ করে পেন্সকে এক অসম্ভব অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। পেন্সের ব্যাখ্যা ছিল, তিনি এমন কিছু করতে পারবেন না। সংবিধান অনুসরণে কংগ্রেস সদস্যদের তিনি চিঠি দিয়েছিলেন।

৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের আগে মাইক পেন্সকে এক অসম্ভব দায়িত্ব দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্পের চাওয়া ছিল, পেন্স যেন অধিবেশনে নির্বাচনের ফলের বিরোধিতা করেন এবং এই ফলকে উল্টে দিয়ে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। কিন্তু এ ধরনের কিছু করার এখতিয়ার নেই বলে প্রেসিডেন্টকে জানান পেন্স। একই সঙ্গে মার্কিন সংবিধান অনুসরণ করবেন উল্লেখ করে কংগ্রেস সদস্যদের তিনি একটি চিঠি পাঠান। এতেই চরম ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। এই দিন ওয়াশিংটনে ডাকা সমাবেশে ট্রাম্প পেন্সকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মাইক পেন্স, আমি আশা করি আপনি আমাদের সংবিধান ও দেশের মঙ্গলের জন্য লড়বেন। যদি তা না হয়, তবে আমি ভীষণ হতাশ হব।’

ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত নিজের সমর্থকদের উসকে দিয়ে ক্যাপিটল হিলে হামলায় ঠেলে দিয়েছিলেন, যখন মাইক পেন্স তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আইনসভার ভেতরে ছিলেন। এ ঘটনায় পেন্সের উপদেষ্টারা ভীষণ ক্ষুব্ধ হন।

গত চার বছরে পেন্স এই প্রথম প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছিলেন এবং এখনো করছেন। এ পর্যন্ত যত ঘটনাই ঘটুক, পেন্স ট্রাম্পের হয়ে লড়েছেন। ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। গোপনে প্রেসিডেন্টকে সামলানোর চেষ্টা করলেও প্রকাশ্যে কোনো দিন তাঁর বিরোধিতা করেননি। বরং সব জায়গায় তিনি ট্রাম্পের নানা বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। কখনো কখনো ট্রাম্পের করা কোনো বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামলেছেন একা হাতে। কিন্তু, চরম সংকটকালে ঠিকই রাষ্ট্রের কাঠামোকে সমুন্নত রাখতে কাজ করেছেন।

উল্লেখ্য, মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট কোনোভাবে কাজ চালাতে অক্ষম হলে, তাঁর স্থলে ভাইস প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। এই সংশোধনী প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সংখ্যাগরিষ্ঠের মত প্রয়োজন হবে। এমন পদক্ষেপ নিলে প্রেসিডেন্ট এর বিরোধিতা করে কংগ্রেসকে চিঠি দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে পেন্স ও মন্ত্রিসভার হাতে চার দিন সময় থাকবে প্রেসিডেন্টের এমন অবস্থানের বিরোধিতা করার জন্য। এর পর কংগ্রেসে বিষয়টি উঠবে। সেখানে প্রতিনিধি পরিষদে ২৯০ ভোট বা তার বেশি ও সিনেটে ৬৭ ভোট বা তার বেশি ভোট এই প্রস্তাবের পক্ষ গেলে প্রেসিডেন্ট স্থায়ীভাবে ক্ষমতা হারাবেন। তবে প্রাথমিকভাবে এমন পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানালেও এই বিকল্পকে একেবারে বাতিল করে দেননি পেন্স।

পেন্স শুরুতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়ার বিরোধী। কারণ, তিনি মনে করেন, এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে, তা ব্যর্থ হবে। সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারেন।

 

এএফ/০১