কুলাউড়ায় হতদরিদ্রের কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা লুটপাট

জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া


জানুয়ারি ১২, ২০২১
১২:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১২, ২০২১
১২:১২ পূর্বাহ্ন



কুলাউড়ায় হতদরিদ্রের কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা লুটপাট
শ্রমিকের বদলে খননযন্ত্রে কাজ

হতদরিদ্র মানুষের নামের ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা হয়, কিন্তু ইউনিয়নের মেম্বার-চেয়ারম্যানরা সেই টাকা তুলে নিয়ে যান। ৮ হাজার টাকার চেকে স্বাক্ষর করে দিলে গরিব মানুষকে সর্বোচ্চ ১ হাজার কিংবা ৫শ টাকা দেন তারা। হতদরিদ্র মানুষ চেকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। হতদরিদ্র লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ হতদরিদ্র মানুষের চেক জনপ্রতিনিধিরা আগেই নিয়ে নেন।

হতদরিদ্রের কর্মসৃজন প্রকল্পের (৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প) মাধ্যমে অর্থাৎ একেবারেই হতদরিদ্র মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন করা এ প্রকল্পের মুল উদ্দেশ্য। কিন্তু মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় এই প্রকল্পে এখন হতদরিদ্ররা কাজ করেন না। তাদের কপালে ভাগ বসিয়েছে খননযন্ত্র (এসকেভেটর)। বলা যায়, তাদের কপাল পুড়িয়েছে মাটি কাটার এই যন্ত্র। শুধু হতদরিদ্রের কর্মসৃজন প্রকল্পেই নয়, কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) এই দুই প্রকল্পেও একইভাবে শ্রমিক ব্যবহার না করে যন্ত্রের সাহায্যে কাজ সম্পাদন করছেন জনপ্রতিনিধিরা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হতদরিদ্রের কর্মসৃজন প্রকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরে কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে জন্য মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে হতদরিদ্র ২ হাজার ৪৯০ জন মানুষ কাজ করার কথা। দৈনিক ৭ ঘন্টা হিসেবে ৪০ দিন কাজ করবেন তারা। জনপ্রতি রোজ ২শ টাকা হারে ৮০ দিনে একজন হতদরিদ্র মোট ৮ হাজার টাকা পাবেন। সেই টাকা ব্যাংকের একাউন্টে (হিসাবে) জমা হবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসব হতদরিদ্রের টাকা নিয়ে দেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের বিল দেওয়া হয়। তবে এই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা যায় প্রকল্প চেয়ারম্যানের পকেটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হতদরিদ্রের কর্মসৃজন প্রকল্পের সিংহভাগ টাকাই লুটপাট হয়। নামকাওয়াস্তে দেখানো হয় কাজ।

সরেজমিনে হতদরিদ্রের কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ‘দানাপুর ভটরমার খাড়া’ খাল খনন প্রকল্পে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের সভাপতি ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। যদিও কাজটি এলাকার হতদরিদ্র লোকজন দিয়ে বাস্তবায়ন করার কথা, কিন্তু প্রকল্পের সভাপতি মাটি কাটার খননযন্ত্র দিয়ে কাজ সম্পাদন করছেন। ৮ দিনে কাজ সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে দৈনিক ১২ হাজার টাকা। সেই অনুপাতে মোট ৯৬ হাজার টাকা খরচ হওয়ার কথা। বাকি টাকাগুলোর কোনো হদিস নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জানান, ২শ টাকা দৈনিক মজুরিতে উন্নয়ন কাজে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায় না। কুলাউড়া তথা সিলেট অঞ্চলে বর্তমানে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি নূন্যতম ৩শ টাকা থেকে ৫শ টাকা। ফলে এই টাকায় কেউ কাজ করতে চায় না।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আলী জানান, যারা এ ধরনের কাজ করবে, প্রমাণ পেলে তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে।

কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, 'বিষয়টি শুনেছি। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। যদি অভিযোগ পাই, তাহলে তদন্তক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তাছাড়া বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিল রেখে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। সুযোগ পেলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করব।'

 

জেএইচ/আরআর-০১