সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ
জানুয়ারি ১২, ২০২১
১১:৪৭ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১২, ২০২১
১১:৪৭ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ ছড়াচ্ছে নির্বাচনী মাঠজুড়ে। চূড়ান্ত লড়াইয়ে নিজেদের স্থান দখলে সরব প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে নিরব অবস্থানে আছেন ভোটাররা। আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক ও পাড়া-মহল্লা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। মাইকিং, গণসংযোগে মুখরিত পুরো শহর। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার সবখানে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কে শেষ হাসি হাসবেন তা বলা যাচ্ছে না এখনই।
১৯৯৯ সালে কমলগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। কমলগঞ্জ পৌরসভার আয়তন ৯.৮৩ বর্গ কিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ড এবং ২৯টি মহল্লা নিয়ে এ পৌরসভাটি গঠিত। বিগত ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে পৌর মেয়র পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছিলেন ৭ জন। প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জুয়েল আহমেদ নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩৯৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকারিয়া হাবিব বিপ্লব তালগাছ প্রতীকে ভোট পেয়েছিলেন ২৮০৪টি ও বিএনপির প্রার্থী আবু ইব্রাহীম জমসেদ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ২১৩৩টি ভোট। এছাড়া বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হাছিন আফরোজ চৌধুরী ৪২৬ ভোট, রফিকুল আলম ৮০ ভোট, নজরুল ইসলাম ৮০ ভোট এবং মাসুক আহমদ পেয়েছিলেন ২৩ ভোট।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। এই চার প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী মো. জুয়েল আহমেদ (নৌকা), বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী আবুল হোসেন (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন (নারিকেল গাছ) ও আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হেলাল মিয়া (জগ)।
প্রার্থীরা সরব প্রচার চালালেও নিরব রয়েছেন ভোটাররা। নির্বাচনে শুরুর দিকে চায়ের দোকানে আড্ডা কিংবা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে যে ভোটাররা আলোচনায় চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন, এখন সেই ভোটাররাই নিরব ভূমিকা পালন করছেন। তাই দিন যত ঘনাচ্ছে নির্বাচনের উত্তাপ তত বেশি ছড়াচ্ছে। মেয়র হিসেবে বিজয়ের মালা কে পরবেন তা বলা যাচ্ছে না এখনই । তবে এবারের নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। আর বিগত পৌর নির্বাচনের তুলনায় এবারের পৌর নির্বাচন বেশ জমজমাট বলছেন ভোটাররা।
কমলগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এবার মেয়র পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. জুয়েল আহমেদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেনের লড়াইয়ের সম্ভারনা রয়েছে। দু'জনই হেভিওয়েট প্রার্থী। আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হেলাল মিয়া লড়ছেন মেয়র পদে। তবে কিছুটা নিরব প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী ভোটাররা।
এদিকে, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দোয়া প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের মন জয় করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন নিরবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যোগাযোগ রাখছেন স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সুব্রত দেবরায় সঞ্জয় জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী লড়ছেন মেয়র পদে। এরা চারজনই দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করছেন। প্রার্থীদের নিয়ে ভোটাররা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন। উভয়দলের দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়া সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন সব প্রার্থীই পরিচিত মুখ, কাকে রেখে কাকে খুশি করবেন। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণেই হয়তো সাধারণ ভোটাররা নিরবতা পালন করছেন। ভোটারদের এই নিরবতা মেয়র পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তৎপর। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রোধে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৪ জন মেয়র, ৩১ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১১ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ৪৪ জন প্রার্থী চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি কমলগঞ্জ পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে এ নির্বাচনে। কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৯০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ হাজার ৮৮৭ জন ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৭ হাজার ১৮ জন। ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি ভোটকেন্দ্রের ৪২টি কক্ষে এবার ভোটগ্রহণ হবে।
এসডি/আরআর-০১