সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার
জানুয়ারি ৩০, ২০২১
০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ৩০, ২০২১
০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
আগামীকাল শনিবার মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের বাকি আর মাত্র একদিন। গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. ফজলুর রহমানের প্রচার-প্রচারণা বেশ চোখে পড়লেও বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষের প্রার্থী মো. অলিউর রহমানের প্রচার খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার ছিল চোখে পড়ার মতো।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে এসেছে ততই প্রচারে বেড়েছে নির্বাচনী উত্তাপ। তবে মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের প্রচারে ছিল ব্যতিক্রম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর তেমন কোনো প্রচার ছিল না। পোস্টার, লিফলেট এবং মাইকে ব্যাপক প্রচার চলেছে প্রার্থীদের পক্ষে। আর এক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারের শেষদিনে মৌলভীবাজার পৌরশহর ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে শহরের কয়েকটি এলাকা ছেয়ে গেছে পোস্টারে। শহরের পশ্চিমবাজার, সাইফুর রহমান রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, চৌমোহনা, কুসুমবাগ এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট, অলি-গলি, পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের সাদাকালো বিভিন্ন ডিজাইনের পোস্টার টানানো হয়েছে। এছাড়াও মাইক দিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চলছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী নির্বাচনের অংশ নিয়ে দুইধরণের কৌশল অবলম্বন করে নির্বাচনী প্রচার করছেন। তিনি প্রথম কৌশল হিসেবে বেছে নেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে ধারাবাহিক বর্ধিত কর্মিসভা আয়োজন। এই বর্ধিত সভার মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি দলও হয়েছে সুসংগঠিত। দ্বিতীয় কৌশল হিসেবে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই এসব দলীয় নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের সম্পৃক্ত করে ধারাবাহিক উঠান বৈঠক করেছেন নৌকার প্রার্থী ফজলুর রহমান। বর্ধিত সভার পাশাপাশি চলা প্রতিটি উঠান বৈঠকে মেয়র প্রার্থী ফজলুর রহমান তার সময়ে নেওয়া নানা উন্নয়ন ও পৌরসভার চলমান উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন ভোটারদের কাছে। প্রতিটি বৈঠকেই দলের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে আওয়ামী লীগ একাট্টা। আর নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডের পাড়ায় পাড়ায় নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রচারের মাত্রাও বেড়েছে। পৌর এলাকার প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দলীয় প্রতীক সম্বলিত লিফলেট হাতে দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন মেয়র প্রার্থী ফজলুর রহমান।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, নির্বাচনের প্রচারে যেভাবে জনসাধারণ স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তাতে আমি শতভাগ নিশ্চিত ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের প্রতীক নৌকা বিজয়ী হবে।
অপরদিকে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষের প্রার্থী অলিউর রহমান বিগত নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন। প্রার্থী হিসেবে জনপ্রিয় না হলেও প্রতীক বরাদ্দের দিন শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোডে নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন তিনি। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানের নেতৃত্বে গত ১২ জানুয়ারি শহরের পশ্চিমবাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চলে তার পক্ষে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মতো বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে বড় ধরনের কোনো দলীয় বর্ধিত সভা কিংবা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক করতে দেখা যায়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি সমন্বয় সভা হয়েছে দলের শীর্ষ নেতাদের বাসায় কিংবা ব্যক্তিগত অফিসে। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনায় নির্বাচনী প্রচারে কৌশলগত অবস্থানে পিছিয়ে ছিলেন বিএনপির প্রার্থী।
এদিকে নির্বাচনে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে বিএনপির শিবিরে শঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, পৌরসভার ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দিতে চান। ভোটাররা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভোটের পরিবেশ যেভাবে নষ্ট করা হয়েছে, তাতে ভোটাররা বেশ শঙ্কিত। তারা ভোট দিতে ভয় পাচ্ছেন।
প্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্ধিত সভা না হলেও পৃথক পৃথকভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সমন্বয় সভা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ৪৩ হাজার ৪৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২২ হাজার ৭৫০ জন আর নারী ভোটার ২০ হাজার ৬৯৬ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জনসহ মোট ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মাসুদ আহমদ।
এসএইচ/আরআর-০৬