ওসমানীনগরে গাঁজা নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হন রিকশাচালক

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


জানুয়ারি ৩০, ২০২১
১০:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ৩০, ২০২১
১০:৫০ অপরাহ্ন



ওসমানীনগরে গাঁজা নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হন রিকশাচালক
আদালতে খুনির স্বীকারোক্তি

সিলেটের ওসমানীনগরে গাঁজা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে রিকশাচালক কালু মিয়াকে একাই খুন করেন হাসান মিয়া মনাই (২৬)। মনাই মৌলভীবাজার জেলা সদরের মীলপুর (মাঝপাড়া) গ্রামের ইলিয়াছ আলীর ছেলে। গতকাল শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসান মিয়া মনাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন। পরবর্তীতে আজ শনিবার (৩০ আনুয়ারি) সিলেটের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন তিনি।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, রিকশাচালক কালু মিয়া (৬৫) বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের শিওরখাল গ্রামের মৃত জানু মিয়ার ছেলে। গত ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে গহরপুর মাদরাসার ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হন কালু মিয়া। এ সময় বালাগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর (গহরপুর) গ্রামের ছহুল আহমদের গরুর খামারের কাজে নিয়োজিত হাসান মিয়া মনাই কালু মিয়ার রিকশাযোগে ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে পাঁচপাড়ার পোস্ট অফিসের কাছে অসাবধানতাবশত এক পথচারীর গায়ের উপর রিকশা তুলে দেন চালক কালু মিয়া। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আহত পথচারী রিকশাসহ কালু মিয়া ও যাত্রী মনাইকে তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আটকে রাখেন। একপর্যায়ে রিকশা আটকে রেখে চালক ও যাত্রী দু'জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর কালু মিয়া ও মনাই পায়ে হেঁটে তাজপুর বাজারে পৌঁছেন এবং চালক কালু আলাদা হয়ে সরু একটি গলির মধ্যে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে কালু মিয়া ও মনাই মাদরাসার উদ্দেশে রওয়ানা হন। আলাপের একপর্যায়ে কালু মিয়া মনাইকে জানান, তার কাছে ২৫০ গ্রাম গাঁজা আছে এবং তা তিনি সেবন করবেন। এরপর কালু মিয়া রাস্তার পাশে বসে গাঁজা খাওয়ার প্রস্তুতি নিলে যাত্রী মনাই কিছু গাঁজা চান। কালু তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে মনাই কালুর ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। কালু একা গাঁজা সেবনের পর দু'জনে আবারও পায়ে হেঁটে মাদরাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। হাওরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে চক মন্ডলকাপন চকেরবন্দ গ্রামে গাঁজার নেশায় আচ্ছন্ন কালু মিয়া হোঁচট খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। তখন মনাই রাগের বশে পরনে থাকা জ্যাকেটের ফিতা কালু মিয়ার গলায় পেঁচিয়ে সজোরে টান দিয়ে কালু মিয়াকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরদিন কালু মিয়ার ছেলে কয়েছ আহমদ জাহেদ বাদী হয়ে ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর শুক্রবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে মনাইকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। 

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, 'খুন হওয়া চালকের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ এ খুনের রহস্য উদঘাটনে নামে। এই গুপ্তহত্যার মোটিভ নিয়ে ব্যপক পর্যালোচনা করে হাসান মিয়া মনাইকে টার্গেট করে মৌলভীবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি মনাই একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি আদালতে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।'

 

ইউডি/আরআর-১৩