শেষ হলো নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ৩১, ২০২১
০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ৩১, ২০২১
০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন



শেষ হলো নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন

সিলেটের নারীদের অগ্রযাত্রায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত তিনদিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এই মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।

এম এ মান্নান বলেন, ‘সিলেটের নারীদের জাগরণ দেখে আমি অভিভূত। নারীরা যে এগিয়ে যাচ্ছে আজকের সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের এতগুলো স্টলই তা প্রমাণ করে। নারীরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন ভবিষ্যতে নারী ও পুরুষকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ থাকবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রধান প্রেরণা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের সুবাদে দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যেও সফল হচ্ছেন। হাওরাঞ্চলের নারীরাও এখন অনলাইনে নিজেদের উদ্ভাবিত পণ্য বেচাকেনা করছেন। শেখ হাসিনা সরকারের কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের নারীদের প্রেরণার উৎস। তার সাহসিকতা ও নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পদ্মা সেতুর মতো একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। তাই আমাদের উচিত শেখ হাসিনাকে সমর্থন করা, তার হাতকে শক্তিশালী করা।’

এমএ মান্নান বলেন, ‘শেখ হাসিনা জানেন, বিদ্যুৎ হচ্ছে জাদুর কাঠি। তাই তিনি প্রথমেই বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জে নিজের গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানো নিয়ে অতীতের শঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে কখনও ভাবিনি হাওরাঞ্চলে আমার গ্রামে বিদ্যুৎ যাবে। এখন শুধু আমার বাড়ি নয়; শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। এর ফলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে গ্রাম ও শহরের নারী-পুরুষ। যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন হওয়ায় দেশের মায়েদের সবচেয়ে উপকার হয়েছে। তারা ঘরের বাইরে যেতে পারতেন না। এখন ঘরে বসে তারা অনেক কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।’

সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। ৬ লেন সড়ক হয়েছে। সিলেট-ঢাকা সড়কও অচিরেই ৬ লেনে উন্নীত হবে। এ নিয়ে হতাশার কিছু নেই। একইসঙ্গে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করা হবে।’

শনিবার সন্ধ্যায় মেলা স্থলে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী প্রথমে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন এবং নারীদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড দেখে অভিভূত হন। এরপর তিনি সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের নির্বাহী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম। বক্তব্য দেন, রপ্তানিকারক গ্রুপ সিলেটের সভাপতি ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সহ-সভাপতি হিজকিল গুলজার, বর্তমান সহসভাপতি চন্দন সাহা প্রমুখ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জানান, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা নীতিমালা রয়েছে, একটি শাখাও আছে। সিলেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ নীতিতে লোন দিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ^াস দেন তিনি।
খুরশীদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে বর্তমান সরকার সিএসএমই খাতে বরাদ্দকৃত ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৫ শতাংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়াও নারী উদ্যোক্তাদেরকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এটিএম শোয়েব সিলেটে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা দূর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও সেভাবে উন্নত হয়নি। সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত না হলে সিলেটে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে না এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর সিলেটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করছে, কিন্তু পর্যাপ্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা তাদেরকে কাজে লাগাতে পারছি না।’ তিনি সিলেটে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি সিলেটের নারী উদ্যোক্তাদের আলাদা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন তৈরির জোর দাবি জানান।

নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার প্লাটফর্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগরের মির্জাজাঙ্গালস্থ নির্ভানা ইন প্রাঙ্গনে প্রথমবারের মতো এ মেলা আয়োজন করে সিলেট চেম্বার। ৫৫টি স্টলের অংশগ্রহণে মেলায় সিলেটের নারী উদ্যোক্তাদের কর্মদক্ষতা ও ব্যবসা ক্ষেত্রে তাদের ব্যাপক আগ্রহের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সহ সভাপতি তাহমিন আহমদ, পরিচালক  মো. মামুন কিবরিয়া সুমন, মাসুদ আহমদ চৌধুরী, মুশফিক জায়গীরদার, আব্দুর রহমান জামিল, হুমায়ুন আহমদ, মো. আতিক হোসেন, আলীমুল এহছান চৌধুরী, মো. আমিনুজ্জামান জোয়াহির, সাবেক পরিচালক এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন সাব কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মধুমিতা ইসলাম, হেলেন আহমদ প্রমুখ।

আরসি-০৮