বিশ্বনাথে কৃষক হত্যার ঘটনায় মামলা

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
০২:২৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
০২:২৭ পূর্বাহ্ন



বিশ্বনাথে কৃষক হত্যার ঘটনায় মামলা

সিলেটের বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে কৃষি জমিতে পানি সেচকে কেন্দ্র করে কৃষক ছরকুম আলী দয়াল (৭৫) হত্যার ঘটনায় জলমহালের ইজারাদার পক্ষের সাইফুল আলমকে প্রধান অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাতিজা আহমদ আলীর দায়ের করা লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার ৬ দিনের মাথায় মামলাটি রেকর্ড করেছে পুলিশ। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত আফতাব আলীর পুত্র সাইফুল আলমসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ২৮ জানুয়ারি চাউলধনী হাওরের কান্দিকাটার খাল নামক স্থানে জলমহালের ইজারাদার (সাইফুল গং) পক্ষের হামলায় নিহত হন কৃষক ছরকুম আলী দয়াল। আর ২৯ জানুয়ারি বিকেলে হত্যার প্রতিবাদ সভা শেষে সন্ধ্যায় নিহতের ভাতিজা আহমদ আলী থানায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন।

কৃষক দয়াল হত্যা মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন, চৈতননগর গ্রামের মৃত মনোহর আলীর পুত্র সিরাজ উদ্দিন, একই গ্রামের তাহিদ আলীর পুত্র দিলোয়ার হোসেন, আবদুল লতিফের পুত্র আছকির আলী, মৃত হামিদ আলীর পুত্র আব্দুল মালিক, মৃত ইছকন্দর আলীর পুত্র ফরিদ মিয়া, মৃত হারুন রশিদের পুত্র মামুন রশিদ, দিলাবর আলীর পুত্র সুমন, মনোহর আলী পুত্র নাসির উদ্দিন, মৃত লিলু মিয়ার পুত্র আকবর মিয়া, ঘাগুটিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র আব্দুল জলিল, একই গ্রামের মৃত রইছ আলীর পুত্র আঙ্গুর, মৃত ছিদ্দেক আলী ছিদইর পুত্র নূর ইসলাম, ইসলামপুর গ্রামের মৃত আয়না মিয়ার পুত্র লুৎফুর রহমান, একই গ্রামের মখলিছ আলীর পুত্র পারভেজ, মৃত তোতা মিয়ার পুত্র শায়েক, দশঘর টিলাপাড়া গ্রামের তাহিদ আলীর পুত্র আশরাফ উদ্দিন আসাম উরফে আসাম উদ্দিন আশরাফ, একই গ্রামের মৃত মাফিজ আলীর পুত্র হাফেজ শাহেদ আহমদ উরফে শাহেদ, রিপন মিয়ার পুত্র জাহাঙ্গীর ও কাওছার, দশপাইকা গ্রামের মৃত লিলু মিয়ার পুত্র ফিরুজ মিয়া, একই গ্রামের ইরফান আলী পুত্র কবির আহমদ, দশঘর নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত শফিক আলীর পুত্র শাহীন, মৃত আবুল লেইছের পুত্র আবদুল হামিদ হামদু, পূর্ব শেখেরগাঁও গ্রামের আবদুল মছব্বিরের পুত্র বশর, ছিক্কাগাঁও (ছিক্কা নোয়াগাঁও) গ্রামের মৃত সোনাহর আলীর পুত্র দিলু মিয়া, দশঘর কামারগাঁও গ্রামের বাহার উদ্দিনের পুত্র মোহাম্মদ আলী, একই গ্রামের মৃত আব্দুল মনাফের পুত্র জোনাব আলী, মৌলভীরগাঁও গ্রামের মৃত তৈমুছ আলীর পুত্র আবুল হোসেন এবং ভাটিপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিন ওরফে জামাল।

ইতোমধ্যে পুলিশ দশঘর টিলাপাড়া গ্রামের তাহিদ আলীর পুত্র আশরাফ উদ্দিন আসাম ওরফে আসাম উদ্দিন আশরাফ, একই গ্রামের মৃত মাফিজ আলীর পুত্র হাফেজ শাহেদ আহমদ ওরফে শাহেদ ও ভাটিপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিন ওরফে জামালকে গ্রেপ্তার করেছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বনাথ উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওর চাউলধনী। প্রতিবছর এই হাওরে কয়েক কোটি টাকার ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। গত ২৮ জানুয়ারি হাওরে কৃষিজমিতে পানি সেচ দেওয়াকে কেন্দ্র করে জলমহালের ইজারাদার (সাইফুল গং) পক্ষের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন কৃষক ছরকুম আলী দয়াল ও আহত হন ১৫ জন।

এ বছর শর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদার কর্তৃক পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি সেচ করে হাওরের জলমহালে মাছ ধরায় এবার পুরো হাওরে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চলসহ শুকিয়ে গেছে হাওরের ১৬টি বিল, ৩০টি খাল এবং নালাসহ ৬ শতাধিক পুকুর। পানির অভাবে জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে চাষাবাদের জন্য তৈরি করা অধিকাংশ বীজতলা। এতে জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওরপাড়ের ২৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক। তাই হাওরের ইজারা বাতিল, সীমানা নির্ধারণ এবং স্লুইসগেট নির্মাণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা।

 

এমএ/আরআর-০৯