সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে করোনার টিকার দাবি বাসদের

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১
০২:০৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১
০২:০৬ পূর্বাহ্ন



সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে করোনার টিকার দাবি বাসদের

করোনার টিকা নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করে দেশের সকল নাগরিককে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিনামূল্যে করোনা টিকা প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সিলেট জেলা শাখা। পাশাপাশি করোনার টিকা একাধিক দেশ থেকে আমদানী এবং সহজ প্রক্রিয়ায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান দলের নেতৃবৃন্দ।

আজ রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টায় সিলেট নগরের আম্বরখানায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। 

বাসদ সিলেট জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর এর সভাপতিত্বে এবং বাসদ নেতা প্রনব জ্যোতি পালের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাসদ জেলা নেতা জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন, শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা কাজল আহমদ,মামুন বেপারি, চা শ্রমিক ফেডারেশনের  রত্না বসাক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মহানগর শাখার আহ্বায়ক সনজয় শর্মা ও ঋত্বিক কুমার দেব প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘করোনা মহামারিতে দেশের মানুষের অর্থনীতি ও জীবন যখন বিপর্যস্ত, সেই সময় সরকারের প্রশ্রয়ে একদল মুনাফালোভী দুর্বৃত্ত মাস্ক, পিপিই, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে দেশে নৈরাজ্য ও জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করেছিল। এই দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারীদের হাত থেকে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা রক্ষার জন্য দেশবাসী লড়াই করছে।’

করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে নতুন করে বাণিজ্য শুরু হয়েছে মন্তব্য করে তারা বলেন, ‘২ ডলার মূল্যের অক্সফোর্ডের টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ ডলার দিয়ে কিনে তা ৫ ডলারে সরকারকে সরবরাহ করবে সরকারের উপদেষ্টা সালমান রহমানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। এর মাধ্যমে কোন টেন্ডার ছাড়াই বেক্সিমকোকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাক্সিন এর জন্য ৬ কোটি ডলার বা ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার।’ বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতিও একই প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, ‘এতে ১৩ ডলারে বিক্রি করে মুনাফা লুটবে তারা। অথচ মাত্র ১০ হাজার কোটি বরাদ্দ করলে গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের দেশে টিকা তৈরি অথবা সরাসরি অক্সফোর্ডের টিকা সরকারি উদ্যোগে এনে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে প্রদান করা সম্ভব ছিল।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেছে। ১২টি দেশে অনুমোদনের পরেও একাধিক দেশ থেকে ভ্যাক্সিন না এনে শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইনসটিটিউট থেকে ভ্যাক্সিন আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের।’ তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এতে দেশের নাগরিকদের ভ্যাক্সিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’ নেতৃবৃন্দ শুধু ভারতের উপর নির্ভরশীল না থেকে একাধিক দেশ থেকে ভ্যাক্সিন আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানান।

বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে রাষ্ট্র ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করতে পারে এবং করোনাকালে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে, ভ্যাক্সিনের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সক্ষমতা সেই রাষ্ট্রের আছে। কিন্তু সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কতিপয় ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে ভ্যাক্সিন আমদানি ও বিপননের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্য ও মুনাফা যেমন বাড়বে তেমনই দলীয়করণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বাড়বে। দেশের মানুষ যখন বিনামূল্যে করোনা ভ্যাক্সিন প্রদান, পরীক্ষা ও চিকিৎসার দাবি করছে। তখন সরকার নীতি নিয়েছে ‘টাকা যার টিকা তার’ ও ‘টাকা যার চিকিৎসা তার’। যা একমাত্র গণপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারই করতে পারে।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘করোনায় যখন দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে, প্রায় ১১ কোটি মানুষ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, অসংখ্য মানুষ কর্মহীন বেকার হয়ে পড়েছে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দিশোহারা,তখন করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্য দেশের মানুষের নির্মম পরিহাসের সমান।’

 

 

এএফ/০২