ঐতিহ্যবাহী কাং খেলায় মেতেছেন কমলগঞ্জের মণিপুরিরা

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
০২:১৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
০২:১৪ পূর্বাহ্ন



ঐতিহ্যবাহী কাং খেলায় মেতেছেন কমলগঞ্জের মণিপুরিরা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কাং টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মণিপুরি কাং ফেডারেশনের আয়োজনে আদমপুর ইউনিয়নের নয়াপত্তন গ্রামে গত ৩০ জানুয়ারি নিংতম কাং টুর্নামেন্ট শুরু হয়। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি এ টুর্নামেন্টের সমাপনী খেলা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশে বসবাসরত মণিপুরি সম্প্রদায়ের বাইরে আসাম, মিজোরাম, ত্রিপুরার, মনিপুর রাজ্যে এই খেলার খুব প্রচলন রয়েছে। খেলাটি পরিচিতি পেয়েছে মায়ানমার, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর আরও কয়েকটি প্রান্তেও। কিন্তু জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামহলে এই খেলা এখনও স্বীকৃতি পায়নি। তা আদায়ের লক্ষ্যেই এখন লড়তে চাইছে কাং খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলো।

মণিপুরিদের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা এই কাং। ইতিহাসের সেই প্রাচীনকাল থেকেই মণিপুরি সমাজে কাং খেলার প্রচলন ছিল। প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায়, দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতের মনিপুর রাজ্যে রাজত্বকারী রাজা লোইতোংবার শাসনামলে এই কাং খেলার উদ্ভব হয়।

বাংলাদেশ মনিপুরি কাং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইবুংহাল সিংহ শ্যামল ও নিংতম কাং টুর্নামেন্টের সদস্য সচিব আওয়াংতাবম সমরেন্দ্র বলেন, এ বছর নিংতম কাং টুর্নামেন্টে মণিপুরি সম্প্রদায়ের পুরুষদের ৮টি দল ও নারীদের ৫টি দল অংশগ্রহণ করছে। প্রতি শুক্রবার পুরুষদের এবং শনিবার নারীদের খেলা হয়।

তারা আরও বলেন, বিধি-বিধান আর নীতি-নিয়ম যুক্ত হয়ে কাং খেলা একটি আধুনিক ক্রীড়ায় রূপ নিচ্ছে। কাং খেলার প্রধান উপকরণ কাং, যা হাতির দাঁত, কচ্ছপের বুকের খোল ও মহিষের শিং দিয়ে তৈরি। ১৮৫১ সালে মহারাজ চন্দ্রকীর্ত্তি সিংহ মনিপুরের রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তিনি কাং খেলার জন্য নির্দিষ্ট কোর্ট তৈরি করা, দল গঠন প্রক্রিয়া এবং খেলার নিয়মাবলী সুনির্দিষ্ট করে এই খেলাটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। কাং খেলা ছড়িয়ে পড়ে মনিপুরের সর্বত্র। এমনকি ছড়িয়ে যায় মনিপুরের বাইরে মণিপুরি অধ্যুষিত সকল অঞ্চলে। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত কাং খেলার নিয়মাবলীতে বা কাং হিসেবে ব্যবহৃত ক্রীড়া উপকরণের আকার বা প্রকৃতিতেও কিছু ভিন্নতা এসেছে।

কাং খেলায় বিশেষ পারদর্শী এল রাজ কুমার সিংহ জানান, মৌলভীবাজার জেলায় ১৯৯৭ সাল থেকে নিয়মিত এই খেলা হচ্ছে। এ বছরও কংশং নয়াপত্তন গ্রামে কাং খেলার আসর হচ্ছে। এই খেলায় প্রতিটি দলে ৭ জন করে খেলোয়াড় থাকেন। পুরুষ ও নারীদের যৌথ দল হতে পারে। পৃথক দলও গঠন করা যায়। ৭টি সরলরেখায় উভয়দলের ৭ জন করে খেলোয়াড় পরস্পরের বিপরীতে থাকেন। দু’জন আম্পায়ার খেলা পরিচালনা করেন। ক্রিকেট খেলার স্কোরবোর্ডের মতো কাং খেলায়ও স্কোরবোর্ড থাকে। মসৃন কোর্টে কাং (এক ধরনের ফাইবারের তৈরি প্লেট) বিপক্ষের খেলোয়াড়দের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়।

 

এসডি/আরআর-০৯