ওসমানীনগরে ব্লক তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


মার্চ ০২, ২০২১
০৬:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০২, ২০২১
০৬:৩২ অপরাহ্ন



ওসমানীনগরে ব্লক তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম

ব্লক তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব নিম্নমানের পাথর।

বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের সম্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয়তীরের প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের ব্লক তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাতিল ও নিম্নমানের বালি-পাথর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব্লক। অন্যদিকে সিমেন্ট-বালি-পাথরের মিশ্রণেও মানা হচ্ছে না সঠিক অনুপাত। ফলে নির্মাণাধীন ব্লকগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

জানা যায়, শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টকে নদীভাঙন থেকে রক্ষাসহ একাধিক নদীর উন্নয়নে ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ৭.৪ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা, ১৭৬ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং, ২.৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং ১৯টি ব্রিজের ফাউন্ডেশনে ট্রিটমেন্ট কার্যক্রম। গতবছরের ডিসেম্বরে কুশিয়ারা নদীর ভাঙনরোধে সিলেটের ওসমানীনগর অংশে ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু হয়। 

প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যে ব্লক স্থাপনের কাজ করছে আরএফএল গ্রুপের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরপিএল-আরইজেভি-প্রাণ এবং প্রায় ২৭ কোটি টাকার কাজ করছে নেশনটেক কমিউনিকেশনস লিমিটেড। এই দুই প্রতিষ্ঠান ৫টি প্যাকেজে শতাধিক কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরপিএল-আরইজেভি-প্রাণ প্রথম থেকেই ব্লক তৈরিতে নিম্নমানের অপরিচ্ছন্ন পাথর ব্যবহার করে আসছে। সম্প্রতি হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০ হাজার সিএফটি পাথর বাতিল ঘোষণা করে সেগুলো মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ঠিকাদার বাতিল করা পাথরের সঙ্গে নতুন পাথর মিশিয়ে ব্লক তৈরিতে ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া দুই বালতি সিমেন্টের সঙ্গে ৬ বালতি বালু এবং ১২ ঝুড়ি (টুকরি) পাথরের মিশ্রণ তৈরির কথা রয়েছে। কিন্তু প্রতিব্যাগ সিমেন্টের সঙ্গে ৭ বালতি বালু এবং ১৩ ঝুড়ি পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার সাদিপুর এলাকায় গিয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইনচার্জ শামীম রেজা কোনো পাথর রিজেক্ট করা হয়নি বলে জানান। তবে এডমিন আবু কাওছার কিছু পাথর বাতিল করার কথা স্বীকার করে বলেন, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর পাথর পরিবহনের সঙ্গে জড়িত একাধিক চালক ও ঠিকাদারের স্টোরকিপার জানান, মাঠ থেকে কোনো পাথর সরানো হয়নি।

অন্যদিকে নেশনটেক কমিউনিকেশনস ব্লক তৈরিতেও অনিয়ম রয়েছে। অপরিচ্ছন্ন পাথর ও মাটি মিশ্রিত বালু দিয়ে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। মিশ্রণে প্রতিব্যাগ সিমেন্টের সঙ্গে ৮ বালতি বালু ও ১২ ঝুড়ি পাথর ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে সাইট ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল ইসলামের দাবি, ৬ থেকে ৭ বালতি বালু ও ১১ ঝুড়ি পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সময় তৈরি করে রাখা ব্লকের ভেতরে মাটি থাকতে দেখা যায়। পরিদর্শনকালে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন প্রকল্প ইনচার্জ ইমরান হোসেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরপিএল-আরইজেভি-প্রাণ এর প্রজেক্ট ইনচার্জ শামীম রেজা বলেন, 'আমাদের কোনো পাথর বাতিল করা হয়নি বা এ ধরনের কোনো চিঠিও পাইনি। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করে যাচ্ছি। কাজে কোনো অনিয়ম হলে নমুনা পরীক্ষায় তা অবশ্যই ধরা পড়বে।'

নেশনটেক কমিউনিকেশনস এর ইনচার্জ মো. ইমরান হোসেন বলেন, 'বালুতে সামান্য মাটি দেখা গেলে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিব্যাগ সিমেন্টের সঙ্গে নিয়ম মেনে বালু-পাথরের মিশ্রণ তৈরি হচ্ছে।'

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসার জহিরুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন আগে আরপিএল-আরইজেভি-প্রাণ প্রায় ১০ হাজার সিএফটি পাথর বাতিল করা হয়েছে, যেগুলো তাদের মাঠেই ছিল। 

ব্যস্ততার কারণে মাঠে কয়েকদিন যেতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এক্সপার্টরা এসে তাদের ইচ্ছামতো ব্লকের স্যাম্পল নিয়ে যাবেন, যেগুলোর মান পরীক্ষার পর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, 'পাথর বাতিল করার পর তাদের চিঠি দিয়ে অবগত করেছি। বাতিল করা পাথর ব্যবহার এবং অনিয়ম করলে তারা পার পাবে না। কারণ ব্লক পরীক্ষা করা হবে।'

নেশনটেকের অনিয়মের বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, 'অভিযোগগুলো সঠিক নয়।' এ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে জানালে তিনি প্রমাণগুলো তাকে দেখাতে বলেন।

 

ইউডি/আরআর-০২