ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলস্টেশনে আগুন, নিহত ১

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ২৭, ২০২১
১২:৩৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৭, ২০২১
১২:৩৬ পূর্বাহ্ন



ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলস্টেশনে আগুন, নিহত ১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলস্টেশনে আগুন, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালিয়েছে কওমি মাদরাসার ছাত্ররা। এ পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররম মসজিদে পুলিশি হামলার অভিযোগে শুরু হওয়া বিক্ষোভ থেকে অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় শহরের প্রধান সড়ক টিএ রোডে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা, ভাদুঘর জামিয়া সিরাজিয়া মাদরাসা ও পশ্চিম মেড্ডা দারুল আরকাম মাদরাসার কয়েক শ ছাত্র ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। মুহূর্তে শহরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পুরো সড়কে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত পোস্টার-ফেস্টুন ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

স্থানীয়রা জানান, মাদরাসার ছাত্ররা এরপর বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ছবি ভাঙচুর করে। পরে বিক্ষুব্ধরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেল স্টেশনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে চলমান স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর চিত্র প্রদর্শনী তছনছ করা হয়। রেল স্টেশনের সিগন্যাল, মাস্টার রুম, কন্ট্রোল রুম, কর্মকর্তাদের কক্ষ ব্যাপক ভাঙচুর করে। সব মালামাল একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেল লাইনের  স্লিপারও তুলে ফেলে বিক্ষুব্ধরা। সিগন্যাল বক্স ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের সব প্রকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জানা যায়, ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রবেশ করার সময় বিক্ষুব্ধরা পাথর নিক্ষেপ করলে ট্রেনটি ফিরে যায়। এরপর জেলা পরিষদ কার্যালয় বিকেল সোয়া ৫টায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়। একই সময়ে কাউতলী এলাকায় সিভিল সার্জন অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালায় তারা। শহরের কাউতলী, ভাদুঘরে দিগন্ত পরিবহনের কয়েকটি বাস ও সিএনজি ভাঙচুর করা হয়। সড়কে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় অবরোধ করে মাদরাসাছাত্ররা।

স্থানীয়রা জানান, একই সময়ে মাদরাসার ছাত্ররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার সামনে গিয়ে থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের হামলায় পুলিশ একসময় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ছবি তুলতে গেলে ডেইলি স্টারের জেলা প্রতিনিধি মাসুক হৃদয়কে মারধর ও ক্যামেরা মোবাইল ছিনিয়ে নেয় মাদরাসাছাত্ররা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্ব রোড, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর, নন্দনপুর, মজলিশপুর, ঘাটুরা, পীরবাড়ি, বিরাসারসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লা সব যানবাহন বন্ধ রয়েছে।

শহরের জেলা পরিষদ, পৌর মুক্ত  মঞ্চ, পৌর মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলে তারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা ও সড়ক সজ্জিতকরণ ব্যানার ফেস্টুন ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। তারা নরেন্দ্র মোদি বিরোধী স্লোগান দেয়। এক সময় বিক্ষুব্ধরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা জজের বাসভবনের মূল ফটকে হামলা চালায়। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ প্রায় ৫ শতাধিক লোক জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে গ্যারেজে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় ভবনের নিচ তলার জানালা। এ ছাড়া শহরের ভাদুঘর, কাউতলী, পীরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসার ছাত্ররা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন স্থানে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

জানা যায়, মাদরাসাছাত্রদের ভাঙচুরের সময় আশিক (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের সাগর মিয়ার ছেলে। শুক্রবার বিকেলের দিকে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একই ঘটনায় শহরের ২ নম্বর ফাঁড়ির ইনচার্জ নূরে আলম, ভাদুঘর গ্রামের ইব্রাহিমসহ (২২) পুলিশ, মাদরাসাছাত্রসহ ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রানা নূরুস শামস বলেন, তাকে আহত অবস্থায় আনার পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এরপরই মাদরাসার ছাত্ররা তাকে নিয়ে যায়। আমরা বুঝতেই পারিনি কীভাবে সে মারা গেছে। ময়নাতদন্ত হওয়ার পর বলতে পারব।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সারা শহরেই শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দোকানপাট ও সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ। অঘোষিত কারফিউর মতো অবস্থা। সারা শহরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তবে জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান নিহত হওয়ার ঘটনা জানেন না বলে জানান। তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান।

অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসাছাত্রদের আগুন ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বিকেল ৫টার পর থেকে শহরের হালদারপাড়ার দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জমায়েত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকনের নেতৃত্বে মিছিল বের করে। সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার ও যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুর নেতৃত্বে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন কয়েক শ নেতাকর্মী।

রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে হামলা ও ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী মাদ্রাসাছাত্রদের তাণ্ডবের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

বিএ-১৫