বড়লেখায় একজনকে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষ

বড়লেখা প্রতিনিধি


এপ্রিল ২৭, ২০২১
১১:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৭, ২০২১
১১:০৯ অপরাহ্ন



বড়লেখায় একজনকে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষ

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মসজিদ কমিটির পদ-পদবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন তাজ উদ্দিন (৪৫) নামের একজনকে কুপিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত তাজ উদ্দিন চারদিন ধরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হিনাইনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত তাজ উদ্দিনের বড় ভাই ইমান উদ্দিন পরদিন শনিবার (২৪ এপ্রিল) হামলাকারী জব্বার আলীকে প্রধান আসামি ও তার ছেলে দোলোয়ার হোসেনকে ২ নম্বর আসামি করে এবং আরও ১০ জনের নামোল্লেখ করে বড়লেখা থানায় মামলা (নম্বর-১১) দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হিনাইনগর শাহজালাল নতুন জামে মসজিদ কমিটির পদ-পদবি নিয়ে হিনাইনগর এলাকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুস্তকিন আলীর ছেলে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিনের সঙ্গে একই এলাকার জব্বার আলীর ছেলে একই মসজিদ কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের বিরোধ চলছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাজ উদ্দিন পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি জব্বার আলীর বাড়ির সামনে আসামাত্র জব্বারের নেতৃত্বে বিবাদীরা তাজের পথরোধ করে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তাজের মাথায় দা দিয়ে কোপ মেরে তাকে গুরুতর আহত করে। পরে বিবাদীরা তাকে ব্যাপক মারধর করে। তাজকে মারধরের খবর পেয়ে তার ভাই আপ্তাব আলী, চাচাতো ভাই মঈন উদ্দিন এবং ভাতিজা সাইদুল ইসলাম ও এনু মিয়া এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদেরও মারধর করে। স্বজনরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাজকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।  

হামলার শিকার তাজ উদ্দিন মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, 'আমি এখনও হাসপাতালে রয়েছি। পুরোপুরি সুস্থ হইনি। আরও কিছুদিন লাগবে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হামলাকারীরা আঘাত করেছে। তারা আমার মাথায় দা দিয়ে কোপ দিয়েছে। হাতে মেরেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'মসজিদটি আমরা এলাকার কয়েকজন মিলে তৈরি করেছি। আমি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। আর দোলোয়ার হোসেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। সে মসজিদের কমিটিতে থাকলেও তেমন কোনো কাজ করে না। মসজিদ নিয়ে দোলোয়ার বিভিন্ন সময় বাজে মন্তব্য করেছে, যা এলাকার সবাই জানে। এছাড়া তার বাবা জব্বার আলী মাদাকাসক্ত। তিনি প্রায় রাতে তার বাড়িতে মদের আসর বসান। এসব নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছি। এতে তারা আমার ওপর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঘটনার রাতে আমি পায়ে হেঁটে বাড়িতে ফিরছিলাম। এ সময় আমাকে তাদের বাড়ির সামনে একা পেয়ে জব্বার আলী ও তার ছেলে দোলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন মিলে মারধর শুরু করে। তারা দা দিয়ে আমার মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। পরে ছাত্রলীগ নেতা দোলোয়ার হোসেন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জুনেদকে ফোন দিয়ে আনেন। জুনেদের নেতৃত্বে কয়েকজন আমার বাড়িতে হামলা করে।'

আহত তাজ উদ্দিনের বড় ভাই মামলার বাদী ইমান উদ্দিন মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, 'হামলার পর আমার ভাইকে হাসপাতালে নেওয়ার হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানেও হামলার চেষ্টা করেছে। আমার ভাইকে মারধর ও বাড়িতে হামলার পর তারা এখন উল্টো আমাদের জামায়াত-শিবির বানিয়ে মামলা করেছে। অথচ আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন।'

তিনি বলেন, 'আমার ভাইয়ের মাথায় ১২টি সেলাই লেগেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে তারা আঘাত করেছে। সে এখন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আমি বিবাদীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।'

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মসজিদ কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'তাজ উদ্দিনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমাদের এলাকার শিবিরকর্মী জাকারিয়া আহমদ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সে ফেসবুকে লিখেছে। আমি তাকে এসব বিষয়ে লেখালেখি না করতে বলেছি। সে আমাদের এলাকার ছেলে। আমি চাই না এসব লিখে সে বিপদে পড়ুক। এটা বলা কি আমার অপরাধ? ঘটনার রাতে আমি তারাবির নামাজ পড়ে এলাকার একটি দোকানে বসেছিলাম। এরই মধ্যে শিবিরকর্মী জাকারিয়া এলাকার ছাত্রদল নেতা জালাল আহমদকে নিয়ে এসে আমাকে গালাগালি করে। অবস্থা খারাপ দেখে আমি সেখান থেকে সরে যাই। পরে তারা আমাকে মারতে জড়ো হয়ে আমার বাড়ির সামনে আসে। বিষয়টি আমি উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারি কামাল ভাই ও উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জুনেদ ভাইকে বলি। পরে তারা এসে পরিস্থিতি খারাপ দেখে পুলিশে খবর দেন। তখন আমাদের এলাকার মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন আমার বাড়ির সামনে এসে বলেন আমরা না কি তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছি। এরপর তাকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি। একপর্যায়ে শিবিরকর্মী জাকারিয়া ও ছাত্রদল নেতা জালাল আহমদের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় কে বা কারা তাজ উদ্দিনের মাথায় আঘাত করেছে জানি না। এখানে তাজ চাচার সঙ্গে আমাদের কারও কোনো বিরোধ নেই। অতীতেও ছিল না। কিন্তু তিনি অকারণে এসে বিরোধে জড়ালেন। এখন তারা আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। আর মসজিদ নিয়ে আমি কোনো বাজে মন্তব্য করিনি। আপনি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।'

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদ বলেন, 'ছাত্রলীগ নেতা দোলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাজ উদ্দিনের কোনো বিরোধ নেই। মূলত এলাকার শিবিরকর্মী জাকারিয়া ফেসবুকে সরকারবিরোধী নানা উস্কানিমূলক পোস্ট শেয়ার দেয়। এসব বিষয় লেখালেখি না করতে ছাত্রলীগ নেতা দোলোয়ার তাকে নিষেধ করে। এ কারণে শুক্রবার রাতে দোলোয়ারকে মারধরের জন্য শিবিরকর্মী জাকারিয়া ও ছাত্রদল নেতা জালালসহ কয়েকজন জড়ো হতে থাকেন। খবর পেয়ে উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারি কামাল ভাইসহ বেশ কয়েকজন সেখানে যান। আমিও সেখানে যাই। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় পুলিশকে বিষয়টি জানাই। পরে পুলিশ আসে। এরই মধ্যে তাজ উদ্দিন চাচা এসে বলেন এখান থেকে কেউ তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছে। আমরা বিষয়টি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। এ সময় শিবিরকর্মী জাকারিয়া ও ছাত্রদল নেতা জালাল আহমদের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় হয়তো তাজ চাচা মাথায় আঘাত পেয়েছেন। বিষয়টি সমাধান করতে গিয়ে এখন আমাকে মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।'

এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার মঙ্গলবার বেলা ৩টায় মুঠোফোনে বলেন, 'হিনাইনগরে এলাকায় দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। উভয়পক্ষই থানায় মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।'

 

এজে/আরআর-০৫