শ্রীমঙ্গলে কৃষকদের চোখে-মুখে অভাব ঘোচানোর স্বপ্ন

কাজী গোলাম কিবরিয়া জুয়েল, শ্রীমঙ্গল


মে ০১, ২০২১
১১:২৭ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০১, ২০২১
১১:২৭ অপরাহ্ন



শ্রীমঙ্গলে কৃষকদের চোখে-মুখে অভাব ঘোচানোর স্বপ্ন

যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে পাকা ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাওর অঞ্চলে চলছে এখন ধান কাটার মহোৎসব। মিঠা-কড়া রোদে পুরোদমে মাড়াইয়ের পাশাপাশি ধান শুকানো ও সিদ্ধ করার কর্মযজ্ঞের উচ্ছ্বাস চলছে ঘরে ঘরে। এই ধানকে ঘিরেই এবার কৃষকের চোখে-মুখে অভাব ঘোচানোর স্বপ্ন। মহানন্দে ঘরে তোলা হচ্ছে ফসল। নবউদ্দীপনায় আন্দোলিত হয়ে উঠেছে কৃষাণ-কৃষাণির জীবন। নতুন ধানের গন্ধে সুরভিত গৃহস্থের বাড়ির বাতাসও।

পরিবেশ প্রতিকূল না থাকায় চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বোরো ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে। পাকা ধানের দানা বেশ পোক্ত। কাটার আগেও এই ধান গাছগুলোই দাঁড়িয়ে ছিল মাথা উঁচু করে। ফলে ভোরেই মাঠে নামতে হচ্ছে কৃষককে। বৈশাখের মাঝামাঝিতে এসে ফসল কাটাও প্রায় শেষ। দল বেঁধে মাঠে ফসল কাটার পর শ্রমিকরা আঁটি বেঁধে মাথায় করে গৃহস্থের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

ক্ষেতের পাশে কিংবা বাড়ির উঠোনে পূর্ণ উদ্যমে হাতেই চলছে মাড়াইয়ের কাজ। অনেক কৃষক ধান মাড়াইয়ে মেশিনের সাহায্যও নিচ্ছেন। মাড়াইয়ের পর রোদে শুকানোর কাজে কৃষাণিকে সহায়তা করছেন কৃষক। দিন-রাত পরিশ্রম করছেন তারা। বাম্পার ফলনের পর নতুন ধানের মন মাতানো সৌরভে চাঙ্গা তাদের জীবন। বসে থাকার সময় নেই গ্রামীণ বধূরও। অনাবিল হাসি নিয়ে বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুলোয় করে ধানের ‘চুছা’ ছাড়ানোর কাজ করছেন তারা। ধান শুকানো থেকে শুরু করে সিদ্ধ করার কাজ মূলত কৃষাণীরাই করেন। এরাই আবার প্রখর রোদে পায়ের পাতা ধানে ডুবিয়ে রোদে নাড়েন।

উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের কৃষক জালাল মিয়া (৪০) হাইল হাওরের বুকে কিছু জমিতে ধান চাষ করেছেন। তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ মৌসুমে প্রত্যাশিত ফসল অর্জন করেছেন তিনি। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় তার জমির ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মুখে হাসি নিয়ে এই কৃষক বলেন, 'এবার ধানের ন্যায্য দাম পেলেই রোদে পুড়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত যে ঘাম ঝড়েছিল, সেই কষ্ট আর মনে থাকবে না।'

একই এলাকার প্রবীণ কৃষক হোসেন আলী জানান, প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফসল পেয়েছেন এবার। বিগত মৌসুমগুলোতে ধার-দেনা করে বোরো চাষ করেছেন তিনি। ফসল ঘরে তোলার আগেই চাপ বাড়ত পাওনাদারদের। যে কারণে বৈশাখের শুরুতেই বেচতে হতো ধান। তাছাড়া মজুদের ব্যবস্থা না থাকায় কম দামে ছেড়ে দিতে হতো কষ্টের ধান। এ মৌসুমে তার আর এমন কোনো সমস্যা নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, 'এ মৌসুমে উপজেলায় ৯ হাজার ৬৫২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাওর অঞ্চলের নিচু জায়গায় ৩ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমি রয়েছে। আশা করছি ফসলের বাম্পার ফলন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে।'

এখন পর্যন্ত কতটুকু ফসল কর্তন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, হাওর অঞ্চলে প্রায় ৬০ ভাগ ফসল কর্তন শেষ এবং সাধারণ অঞ্চলের অনেক জায়গায় এখনও ধানের মুকুল আসেনি। অনেক জায়গায় মুকুল এলেও ফসল কর্তনের উপযোগী হয়নি। তবে সাধারণ অঞ্চলে ১০ ভাগ ফসল কর্তন হয়ে গেছে।

 

জিকে/আরআর-০২