সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ০৭, ২০২১
০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৭, ২০২১
০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলের অধিকাংশ সদস্য এবং বিশ্বের অন্তত ১০০টি দেশের চাপের মুখে অবশেষে করোনা টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকারি প্রশাসন। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ‘ক্যাথরিন তাই’ এক বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ও সমর্থন দানের বিষয়টি জানিয়ে ক্যাথরিন তাই বলেন, ‘বিশ্ব এখন বিশেষ এক ধরনের স্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর বিশেষ সংকট যখন দেখা দেয়, তা সমাধানের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যবস্থা।’
বাইডেন প্রশাসনের এ পদক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে মডার্না, নভোভ্যাক ও ফাইজারের টিকা উৎপাদনকারী কোম্পনিগুলোর শেয়ারের দাম পড়ে গেছে।
করোনা টিকা আবিষ্কারের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়ার জন্য ছয় মাস আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বরাবর আবেদন করেছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এ ব্যাপারে এ দুটি রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশের।
সেই সুপারিশের জন্য ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের প্রায় ৬০ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছিলেন; কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো প্রকার সুপারিশ করতে তীব্র আপত্তি জানান।
তবে তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে টিকা উৎপাদনে মেধাস্বত্ব ছাড়ে যতখানি সম্ভব বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করবেন। ক্যাথরিন তাইয়ের বিবৃতিতে স্পষ্ট হলো, নিজের কথা রেখেছেন বাইডেন।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, পেটেন্টসহ নানাভাবে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের যে বিধি রয়েছে সেটাকে মহামারী মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় টিকা ও অন্যান্য পণ্যের ব্যাপক আকারে উৎপাদনের পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে আসছিল উন্নয়নশীল অনেক দেশ। মেধাস্বত্ব ছাড়ের এই পদক্ষেপ অনুমোদিত হলে টিকার উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো যাবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সুলভ মূল্যে সরবরাহ করা যাবে টিকার ডোজ।
ক্যাথরিন তাইয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখন এই ছাড় আদায়ে ডব্লিউটিওর আলোচনায় জোরালোভাবে অংশ নেবে। ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্তের জন্য ১৬৪ সদস্য দেশের সর্বসম্মতি বাধ্যতামূলক হওয়ায় এতে বেশ সময় লাগবে।
স্বিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী।
কিন্তু হতাশা প্রকাশ করেছে ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো। বুধবার এই কোম্পানিগুলোর ঐক্য সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মেধাস্বত্ব ছাড়ের মাধ্যমে খুব জটিল একটি সমস্যার সরল ও ভুল সমাধান দেওয়া হলো।’
জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির জ্যেষ্ঠ স্কলার ড. আমেশ আডালজা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই ছাড় আসলে সেই সব ওষুধ কোম্পানির স্বত্বের ওপর ‘জবরদখল’, যাদের উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ফলে কোভিড-১৯ টিকার উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।’
আরসি-১৩