সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ
মে ০৮, ২০২১
০৫:১২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৮, ২০২১
০৫:১২ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন এনজিও'র কর্মীরা লকডাউনের মধ্যেও সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা। ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান। এছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন ও ঋণের কিস্তি দেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায় অনেক মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে এনজিও'র ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা। হাতেগোনা কয়েকটি এনজিও তাদের ঋণের কিস্তি আদায়ের কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও অধিকাংশ এনজিও কিস্তি আদায় করছে।
জানা গেছে, অধিকাংশ এনজিও বিবাহিত নারীদের সমিতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে থাকে। খেটে খাওয়া ঋণগ্রহীতারা এই মহামারিকালে তাদের সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যেই এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি কিস্তি আদায়ের জন্য ধরনা দিচ্ছেন, চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায় করার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগ আছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এনজিওকর্মীরা ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে কিস্তির টাকা আদায় করছেন। কোনো কোনো এনজিও'র কর্মী একটি বাড়িতে টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে পাড়ার সব নারী ঋণগ্রহীতাদের নিকট থেকে কিস্তি আদায় করছেন। এ সময় ঋণগ্রহীতাদের মাঝে মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই থাকছে না।
উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঠালকান্দি গ্রামের দিবাংশু দেবনাথ জানান, তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস থেকে তার স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এতে সপ্তাহে তার ৮০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালান আর প্রতিদিন কিছু কিছু জমিয়ে সপ্তাহিক কিস্তি দেন। লকডাউনে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। তিনি বাড়িতে বসে আছেন। কোনো আয়-রোজগার নেই। ধার-দেনা করে তার সংসার চলছে। কিস্তি কীভাবে দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না। গত মঙ্গলবার কারিতাস নামক এনজিও'র আদমপুর শাখার মাঠকর্মী রোকসানা বেগম তার বাড়িতে গিয়ে কিস্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দেন এবং বলেন- 'কিস্তি কীভাবে নিতে হয় তা আমরা জানি'। দিবাংশু দেবনাথ বলেন, 'লকডাউনের সময় কিস্তি আদায় বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'কারিতাস' এর কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর শাখার মাঠকর্মী রোকসানা বেগম বলেন, 'আমাদের কিস্তি আদায় গত কয়েকদিন বন্ধ ছিল। এখন চলমান রয়েছে, তাই কিস্তি আদায় চলছে। কোনো কিছু জানার থাকলে অফিসে এসে জেনে নিন।'
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'ব্র্যাক' এর কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার শাখার মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধেও গ্রাহকদের চাপ দিয়ে কিস্তি আদায়ের খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্র্যাক মুন্সীবাজার শাখার প্রবাসী লোনের মাঠকর্মী জুবাইদুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের ঋণ কার্যক্রম চালু আছে। তবে কোনো গ্রাহকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।'
এ প্রসঙ্গে কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, 'এনজিওগুলোর কিস্তি আদায়ের বিষয়ে এবার আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তারপরও মানবিক কারণে জোর-জবরদস্তি করে কিস্তি আদায় না করা সমীচীন। যারা দিতে সমর্থ, তাদের ক্ষেত্রেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্রঋণ সেক্টরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে গঠিত মনিটরিং সেল এর সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এনজিওগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে লকডাউনের সময় কোনো অবস্থাতেই গ্রাহকদের চাপ দিয়ে ঋণের কিস্তি আদায় করা যাবে না।'
এসডি/আরআর-০১