বেপরোয়া ট্রলিতে ঘটছে প্রাণহানি

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


মে ০৯, ২০২১
১০:৫৮ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ১০, ২০২১
০১:৩৮ পূর্বাহ্ন



বেপরোয়া ট্রলিতে ঘটছে প্রাণহানি

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলছে শ্যালো মেশিনচালিত চার চাকার অবৈধ ট্রলি। চলাচলে তেমন কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় দিন দিন বেগতিক হয়ে উঠছে এই যানের অদক্ষ চালকরা। তাদের বেহিসেবি পথচলায় শুধু ছোটখাটো দুর্ঘটনাই যে ঘটছে তা নয়, মাঝে-মধ্যে চাকায় পিষ্ট হয়ে মূল্যবান জীবন বিলীনের ঘটনাও ঘটছে। তীব্র শব্দদূষণের পাশাপাশি ট্রলির চাকায় ভাঙছে জনগুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়ক। এছাড়া হাট-বাজারসহ যত্রতত্র ট্রলি থামিয়ে রাস্তায় জনভোগান্তির সৃষ্টি করে চালকদের খোশগল্প করতে দেখা যায়। এতে পথচারী কেউ বাঁধ সাধতে গেলে তার সঙ্গে রূঢ় আচরণের অভিযোগও উঠছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নজরদারি না থাকায় পথচারীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে চরম অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।

রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, বিদঘুটে এই গাড়ির বিকট শব্দ শুনলে অনেকেই কান চেপে শব্দদূষণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। এমনকি ট্রলি আসছে টের পেলে কেউ কেউ রাস্তা ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দানবের মতো ধেয়ে আসা এসব গাড়ির গতিবিধি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর মাঝে চলাচলরত অবস্থায় চালকের ধূমপান এবং মোবাইল হাতে কথোপকথনে এগিয়ে যাওয়ার খামখেয়ালিপনায় যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। মাঝে-মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রলি পার্শ্ববর্তী বাড়ি কিংবা ক্ষেতে নেমে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি এর বেপরোয়া চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই অবুঝ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

জানা যায়, গত ২১ মার্চ জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের আলীপুর-শরীফপুর গ্রামে ট্রলি দুর্ঘটনায় ৭-৮ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। এরপর গত ৮ এপ্রিল একই ইউনিয়নের পূর্ব কালীপুর গ্রামে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে সাফায়াত হোসেনের শিশুপুত্র মো. জিসান মিয়া (৪) মারা যায়। ওইদিন শিশু জিসান বাড়ির পার্শ্ববর্তী জমিতে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলু তুলতে বের হয়। আলু তোলে বাড়ি ফেরার পথে পেছন থেকে একটি ট্রলি তাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ট্রলি দিয়ে মাটি আনাসহ সরকার নির্মিত ঘরের ইট, বালু, পাথর আনার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে কমরেড বরুণ রায় স্মৃতি পরিষদের সহ-সভাপতি মো. আলী আমজাদ বলেন, বর্তমানে সড়কে যেসব ট্রলি চলছে সেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব চালকের বিন্দুমাত্র কোনো বৈধতা নেই। সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সেগুলো চালানো হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষও মরছে। আর শব্দদূষণ তো হচ্ছেই। এসব ট্রলি ও চালকদের প্রশাসন কর্তৃক নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে আনা জরুরি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সম্পাদক সমরেন্দ্র আচার্য্য শম্ভু বলেন, ট্রলি নামের যে গাড়ি রাস্তায় চলছে সেটা অবৈধ। এটা জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করা প্রয়োজন। অবৈধ এই ট্রলিটি সাধারণ মানুষ যেমন ব্যবহার করছে, তেমনি প্রশাসনের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে পথচারীসহ জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

সাচনা বাজারের ব্যবসায়ী মো. মহসিন কবীর বলেন, এই গাড়ি যারা চালাচ্ছে তারা আনকোরা এবং অদক্ষ। এদের আচরণও মূর্খের মতো। কেউ কিছু বলতে চাইলে তারা খারাপ আচরণ করছে মানুষের সঙ্গে। তাদের বেপরোয়া ট্রলি চালানোয় জননিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিলীন হতে পারে মূল্যবান জীবন। তখন এর দায়ভার কে নেবে?

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রজব আলী বলেন, ট্রলি চলাচলের ব্যাপারটি পুরোটাই অবৈধ। এ ব্যাপারটি মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বার বার উত্থাপন করেও থামানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে কমবয়সী ছেলেরা ট্রলি চালাচ্ছে। সম্প্রতি যে দু'টো দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোও শিশুবয়সী চালকেরাই ঘটিয়েছে। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করিয়েছি যেন ১৮ বছরের নিচে কোনো চালক ট্রলি, অটোরিকশা ও রিকশা না চালায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, যেসব চালক ট্রলি চালায় তাদের বয়স কম। এছাড়া এই ট্রলি সম্পূর্ণ অবৈধ। কয়েকদিন আগে আমাদের কালীপুরের ৪ বছরের এক শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমাদের এখানে এই মৌসুমে ধান টানার জন্য যেহেতু এটা ব্যবহৃত হয়, সেহেতু এটা বন্ধ করা যাবে না। তবে প্রাপ্তবয়স্ক দক্ষ চালক যেন সতর্কতার সঙ্গে এটা চালায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, এটি আসলে গ্রামীণ রাস্তায় চলাচল করছে। বড় সড়কে চলাচল করছে না। তারপরও যদি কোনো সমস্যার কারণ হয়, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ ব্যবস্থা নেবে, নয় তো আমাদেরকে জানাবে। এছাড়া কৃষি পরিবহনের প্রয়োজনে সেটা ব্যবহৃত হবে। তবে অদক্ষ এবং ১৮ বছরের নিচে কেউ যাতে চালাতে না পারে, সে মোতাবেক সকল ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

বিআর/আরআর-০২