ইউপি কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড : দুর্ঘটনা না কি নাশকতা?

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


মে ১০, ২০২১
১২:১১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১০, ২০২১
১২:১১ পূর্বাহ্ন



ইউপি কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড : দুর্ঘটনা না কি নাশকতা?

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ১৪ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ইউনিয়নে আগুন লাগার রহস্য উদঘাটিত হয়নি। ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত শেষে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে তারা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে প্রতিবেদনে তারা ফরেনসিক ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পুনরায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এর কারণ নির্ধারণের জন্য সুপারিশ করেছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৈদ্যুতিক ত্রুটি, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অবশিষ্টাংশ এবং বজ্রপাতের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়নি। ফলে ইউনিয়নে পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন ধরিয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে জেলা প্রশাসন গঠিত ৭ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল সকালে উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভবনে আগুন লাগে। ওইদিন সকাল ৮টার দিকে বড়লেখা থানার ওসি মৌলভীবাজারে যাওয়ার পথে দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিনকে জানান এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সেমিপাকা ৫টি কক্ষ পুড়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুনে চেয়ারম্যানের কক্ষ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ডিজিটাল সেন্টার ও গ্রাম আদালতের কক্ষসহ পাঁচটি কক্ষের পাশাপাশি ইউনিয়নের ৫টি কম্পিউটার এবং গুরুত্বপূর্ণ সকল নথি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওইদিনই বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরাকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান ও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার অনুপ কুমার সিংহকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

পাশাপাশি ঘটনার দিন জেলা প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক তানিয়া সুলতানাকে আহ্বায়ক এবং জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (স্থানীয় সরকার শাখা) মো. রুহুল আমীনকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

ঘটনার রাতে ইউনিয়ন পরিষদে পাহারার দায়িত্বে ছিলেন গ্রাম পুলিশ সদস্য অনিল সিংহ। তিনি বলেন, রাতে আমি ইউনিয়নে ছিলাম। ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাড়িতে চলে যাই। এরপর হয়তো আগুন লেগেছে। আমি বিড়ি-সিগারেট খাই না। আর ইউনিয়নে কীভাবে আগুন লেগেছে ঠিক বুঝতে পারছি না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, যেদিন ইউনিয়ন পরিষদে আগুন লেগেছে, সেদিন থেকে আমাদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। একটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় আগুন লেগে মুহূর্তেই পুড়ে গেল- এটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আর আমরা নিউজে দেখেছি যে ঘটনাটি তদন্তের পর একটি তদন্ত কমিটি বলেছে, বিদ্যুৎ, বিড়ি-সিগারেট বা বজ্রপাত থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়নি। তাহলে ইউনিয়নে আগুন ধরল কীভাবে? না কি কেউ পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে?

দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন রবিবার (৯ মে) দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমি বাড়িতে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল ৮টার দিকে বড়লেখা থানার ওসি মৌলভীবাজারে যাওয়ার সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। তিনি বিষয়টি ফোনে আমাকে জানান। পরে স্থানীয়রাও বিষয়টি আমাকে জানান। পাশাপাশি তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। খবর পেয়ে আমি দ্রুত গিয়ে দেখি ইউনিয়ন কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, রাতে গ্রাম পুলিশের একজন পাহারায় ছিলেন। তিনি সকাল ৭টার দিকে বাড়িতে চলে যান। এরপর হয়তো আগুন লেগেছে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা বলতে পারব না।

ইউনিয়ন পরিষদে বাইরের কোনো লোক রাতে সেখানে প্রবেশ করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। কারণ করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ। ইউনিয়নও বন্ধ ছিল। উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি বিদ্যুৎ, বিড়ি-সিগারেট বা বজ্রপাত থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তাহলে পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ঠিক বলতে পারছি না। যেহেতু জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাটি তদন্ত করছে, তদন্ত শেষে তারাই বলতে পারবেন আসলে কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে।

এ ব্যাপারে জানতে রবিবার উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বৈদ্যুতিক ত্রুটি, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অবশিষ্টাংশ কিংবা বজ্রপাতের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এজে/আরআর-০৫