জামদানি শার্ট বানালেন সিলেটের নারী, কিনলেন নায়ক রিয়াজ

শুয়াইব হাসান


মে ১২, ২০২১
১১:২৬ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ১৩, ২০২১
১২:৩৩ পূর্বাহ্ন



জামদানি শার্ট বানালেন সিলেটের নারী, কিনলেন নায়ক রিয়াজ

নারীরা সুযোগ আর সহযোগিতা পেলে নিজেদের প্রমাণ করেন কাজের মাধ্যমে। যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশে সে সুযোগই তৈরি হলো। সিলেটের এমন একজন নারী উদ্যোক্তা ইতিহাস গড়লেন।

এবার জামদানির শার্ট তৈরি করেছেন এই নারী এবং যার প্রথম ক্রেতা বাংলাদেশি একজন চিত্রনায়ক। বিষয়টি একেবারে সাধারণ কথা নয়। আগে হয়তো কেউ এভাবে ভাবেননি।

প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙ্গালি নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণত শাড়িকেই বোঝানো হতো। তবে ধীরে ধীরে এই ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। নকশী ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরিও হয়। ১৭০০ শতাব্দিতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল।

জামদানী শার্ট এর প্রবক্তা সিলেটের বনানী চৌধুরী সীমা সিলেট মিররকে জানান, ‘বঙ্গজ’ নামে ফেইসবুক পেজ রয়েছে। এই পেজের মাধ্যমে তিনি অনলাইনে ব্যবসা করেন। মূলত তিনি দেশীয় পণ্য জামদানি নিয়েই কাজ করেন।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গজ নিয়ে আমি অনেকদিন ধরে কাজ করছি। অনলাইনে জামদানী শাড়ী নিয়ে কেউ হয়তো এভাবে কাজ করেনি। নিজস্ব কারিগর দিয়ে নিজস্ব নকশায় শাড়ী ও পাঞ্জাবি তৈরি করে বিক্রি করতাম। কিন্তু, হঠাৎ মনে হলো জামাদানী শার্ট কেন হবে না।’

এই পরিকল্পনা থেকে নকশা তৈরি করে অনলাইনে ছবি পোস্ট করে শুরুতেই সাড়া পেয়েছেন তারা। আর এই শার্টের প্রথম ক্রেতা চিত্রনায়ক রিয়াজ। যিনি ইতোমধ্যে শার্ট পরে একটি ভিডিও বার্তাও দিয়েছেন। আর এতে উৎফুল্ল বনানী।

নায়ক রিয়াজ তার ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এবারের ঈদে একটি চমৎকার শার্ট কিনলাম অনলাইনে বঙ্গজ থেকে। আমার মনে হয়, জামদানী শার্ট আমিই প্রথম কিনলাম। ধন্যবাদ বঙ্গজ, রূপে, রঙে, ঐতিহ্যে বাংলা। এগিয়ে যাক বঙ্গজ, শুভ কামনা।’

বনানী এই চিন্তা ও চেষ্টার সব কৃতিত্ব দিতে চান তার স্বামী বিপ্লব করকে। তিনি মূলত একজন আর্টিস্ট। স্ত্রীকে সৃজনশীল সব চিন্তা, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিপ্লব।

বিপ্লব কর বলেন, ‘জামদানীর প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক। জামদানী পাঞ্জাবি অনেকেই পরেন। কিন্তু, যাদের পেট একটু বড় তারা পাঞ্জাবি পরতে সাচ্ছন্দ্য পান না। তাই, চিন্তা করলাম জামদানী শার্ট বানালে কেমন হয়।’

রিয়াজের ফিডব্যাক পাওয়ার পর অনলাইনে বহু মানুষ জামদানির শার্ট কিনতে যোগাযোগ করছেন। এটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।

সীমা ছোটবেলা থেকেই নাচ করতেন। তিনি নৃত্যশৈলীর সদস্য। পড়াশোনা শেষে চাকরিতে ঢুকেন। শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হলেও তিনি ব্যবসাতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। সিলেটের প্রথম মেয়ে হিসেবে তিনিই প্রথম জামদানি বিক্রি করে লাখপতি হয়েছেন।

স্বামীর অনুপ্রেরণাতেই তিনি গত জুনে ই-কমার্স গ্রুপ উই’তে যোগ দেন। উই-এর মাধ্যমে জামদানি সম্পর্কে অনেককিছু জানতে পারেন। বনানীর ভাষায় তখনই তিনি ‘জামদানির প্রেমে’ পড়েন এবং জামদানি নিয়ে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।

মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করার পরের গল্প শুধুই সফলতার। বঙ্গজের জন্য হ্যান্ড পেইন্টিং গহনা তৈরি করেন বনানীর স্বামী বিপ্লব। বঙ্গজের শাড়ি, গহনা, পাঞ্জাবি এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বিদেশে। আমেরিকা ও প্যারিসের পর যাচ্ছে লন্ডনে, কানাডায়।

বনানী জানান, নিজস্ব কারিগর দিয়ে তৈরি শাড়ি, জামদানি, থ্রি-পিস, টু-পিস ও পাঞ্জাবির মূল্য ৮৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফেসবুকে গ্রুপ খুলে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। 

জামদানির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি ঢাকাইয়া জামদানিই সেরা। কিন্তু বর্তমানে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে জামদানি হয়ে থাকে। তবে একেক জায়গার জামদানির নকশা একেক রকম।’ 

বনানী বলেন, ‘আমি ঢাকাই, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের জামদানি নিয়ে কাজ করছি। ঢাকা ও টাঙ্গাইলের জামদানি কাস্টমাইজ করে থাকি। ঢাকার জামদানি দিয়ে লেহেঙ্গা, গাউন, কটি ড্রেস, শার্ট, পাঞ্জাবি কটি, হিজাব তৈরি করছি এবং টাঙ্গাইলের জামদানি দিয়ে খিমার মাস্ক কাস্টমাইজ করছি।’ 

বনানী মনে করেন চাকরির পেছনে সময় ব্যয় না করে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এ দেশে। তিনি বলেন, ‘যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে যাচ্ছেন বা হয়েছেন তারা ব্যবসা শুরু করার আগে ই-কমার্স ও অনলাইনে ব্যবসার বেসিক বিষয়গুলো জেনে নিলে যে কোনো ব্যবসায় সফল হতে পারবেন।’

আরসি-১৯