মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পুঞ্জি দখল ও গাছ কাটার হিড়িক

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২৫, ২০২১
১২:৪৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৫, ২০২১
১২:৪৯ পূর্বাহ্ন



মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পুঞ্জি দখল ও গাছ কাটার হিড়িক

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার বিভিন্ন পুঞ্জিতে পানজুম দখলের চেষ্টা ও নির্বিচারে গাছ কাটার হিড়িক লেগেছে। সামপ্রতিক সময়ে বিভিন্ন পুঞ্জিতে একের পর এক গাছকাটার ঘটনায় খাসিয়া ও গারো জনগোষ্ঠি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। পানজুম থেকে তাঁদের উচ্ছেদ, চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া ও পানীয়জল ব্যাবহারে বাঁধা প্রদানের ঘটনায় পুঞ্জিত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। জীবনজীবিকা হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়ায় বংশপরম্পরায় টিলা-পাহাড় চূড়ায় তিলে তিলে গড়ে তোলা বসতি ফেলে চলে যাচ্ছে খাসিয়ারা।

পুঞ্জির শতবর্ষী বাসিন্দা এডুয়েন মারলিয়া বলেন, ‘এই পুঞ্জিতে আমার জন্ম। এই পুঞ্জিতে অনেক জুম ও পুরনো গাছ ছিল। এখন আর এগুলো নেই। ধীরে ধীরে সব দখল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছে। এভাবে চললে তারা পুঞ্জিতে বসবাস করতে পারবে না।’

পুঞ্জির হেডম্যান জনপল চিছিম বলেন, উচ্ছেদের ভয়ে আমরা পুরনো গির্জা ঘরটি সংস্কার করতে পারছিনা। জুম দখলের চেষ্টায় যেকোনো সময় আমাদের উপর হামলা চালানো হতে পারে। সেজন্য রাত জেগে পুরুষদের জুমে পাহারা দিতে হচ্ছে। মাত্র ১৭ পরিবারে পুরুষের সংখ্যাও এখন কম। পুঞ্জি ছেড়ে চলে গেছে প্রায় ৩০টি পরিবার। রেহানা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ যেভাবে একের পর এক জুম দখল করছে, তাতে আমরা পুঞ্জিবাসী নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এসব ঘটনা প্রশাসন বা সংবাদমাধ্যমকে জানালে পুঞ্জি থেকে দ্রুত উচ্ছেদ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র একটি প্রতিনিধি দল গত রবিবার মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কাঁকড়াছড়া পুঞ্জি পরিদর্শন করেন। বাপা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাপার সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা, সম্পাদক সুমন দেববর্মা, ঝিমাই পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেত্রী জেসলিনা পলং।

পরিদর্শনকালে বাপা প্রতিনিধিদল জানায়, বিগত কয়েক বছর থেকে কাঁকড়াছড়া পুঞ্জিতে নির্বিচারে গাছ কেটে প্রায় ২০টি পানজুম বিনাশ করে চা-বাগান সৃজন করা হয়েছে। পানজুম বিনাশ করতে যেয়ে ছোটবড় প্রায় হাজারখানেক বৃক্ষ কাটা হয়েছে। এখনো বছর দু'য়েক পূর্বে কাটা গাছের গোড়া প্রত্যক্ষ করেছেন প্রতিনিধি দল। কাটা গাছগুলোর ভেতর বন্যপ্রাণীর খাবার বিভিন্ন ফল-ফলাদি ও ঔষধি গাছও রয়েছে। পানজুম বিনাশ করতে গিয়ে নির্বিচারে চা-বাগান কর্তৃপক্ষের এভাবে গাছকাটা নজিরবিহীন।

বাপা প্রতিনিধি দলের কাছে পুঞ্জিবাসী অভিযোগ করেন যে, গত প্রায় সাত/আট বছর ধরে বাগান কর্তৃপক্ষ অন্তত ২০টি ছোট-বড় জুম দখল করে সেখানে চা-চারা রোপণ করছে। এছাড়া পুঞ্জি থেকে বের হওয়ার প্রধান রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। গত দু-তিন বছরে তাদের কবরস্থান দখল করে সেখানেও চায়ের চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে তারা মরদেহ সৎকারের জায়গাও খুঁজে পাচ্ছেন না। এছাড়া খাবার পানির জন্য খনন করা ইদারা (কুয়া) থেকে সাম্প্রতিককালে তাদের পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে পুঞ্জিবাসীকে ছড়ার পানি খেতে হচ্ছে। চা বাগানের মালিক নিজেকে অনেক প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে পুঞ্জিবাসীদের উচ্ছেদ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাদের অত্যাচারে ইতিমধ্যে পুঞ্জি ছেড়ে চলে গেছে প্রায় ৩০টি খাসিয়া ও গারো পরিবার। মাত্র ১৭টি পরিবার এখনো মাটি কামড়ে পড়ে আছে। কিন্তু সম্প্রতি এই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে ১১ই মে পুঞ্জিবাসীর আয়ের অন্যতম উতস একটি সমৃদ্ধ পানজুম কেটে ফেলা হয়।

বিএ-০৭