রাজনগর প্রতিনিধি
মে ২৫, ২০২১
০২:৪৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ২৫, ২০২১
০২:৪৪ পূর্বাহ্ন
মা ও ছেলে
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের পাঠানটুলা গ্রামের সোহেল বকস (৩২) ছিলেন কোর্ট এলাকার একজন উদীয়মান ব্যাবসায়ী। জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও হঠাৎ করে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর চিকিৎসা নিতে গেলে দেখা যায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পর গতকাল রবিবার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে রাজনগর উপজেলায় যেন শোকের ছায়া নেমে আসে। তবে আরও হৃদয় বিদারক ঘটনা হলো, ছেলের মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা না যেতেই পুত্রশোকে স্ট্রোক করে মারা যান তার মা দোলবাহার বেগম (৬২)। একটি দাফন শেষ করে একই পরিবারের জন্য আরেকটি কবর খুঁড়তে হয়েছে এলাকাবাসীকে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রমজান মাসের শেষের দিকে জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়াসহ নানা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও সোহেল বকস অবহেলায় চিকিৎসা নেননি। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে ভর্তি করা হয় মৌলভীবাজারের একটি হাসপাতালে। কোভিড টেস্টে তিনি পজিটিভ হন। তবে এরই মধ্যে তার ফুসফুসের ৮০-৮৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। পরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটে। সেখানে চিকিৎসার পর তার কোভিড টেস্টের ফল নেগেটিভ আসে। এর দুয়েকদিনের মধ্যে পরিবারের অন্য সদস্যদের কোভিড টেস্ট করালে তার বাবা, মা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
গত শনিবার (২২ মে) সোহেলের বাবা, মা, ভাই ও ভাবীর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু যত সময় যাচ্ছিল তত সংকটাপন্ন হচ্ছিল সোহেল বকসের অবস্থা। তাকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। অবশেষে গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সিলেটের একটি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোহেল বকস রাজনগর বাজারের বকস মোটরসের স্বত্ত্বাধিকারী। স্থানীয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে, পুত্রশোকে রবিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে স্ট্রোক করে মারা যান সোহেল বকসের মা দোলবাহার বেগম। একটি শোক সইবার আগেই আরেকটি শোকে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ১২ ঘণ্টার কম ব্যবধানে একই পরিবারের দুইজনের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা রাজনগর উপজেলায়।
সোহেল বকসের চাচাতো ভাই মুস্তাকিম বকস শিমুল বলেন, চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে পুরো পরিবার শোকস্তব্দ হয়েছিলেন। সন্ধ্যায় চাচাতো ভাইয়ের দাফন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আমার চাচি স্ট্রোক করেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগও আমরা পাইনি। একজনের শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকজনের মৃত্যুর শোক সইতে হচ্ছে পরিবারকে।
এফএইচ/আরআর-১০