ডা. রাফাত : এক মানবিক চিকিৎসক

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি


মে ২৫, ২০২১
০৬:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৫, ২০২১
০৬:৪৫ অপরাহ্ন



ডা. রাফাত : এক মানবিক চিকিৎসক

করোনাকালে নিজের নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখলেও খোলা রেখেছেন ডা. রাফাত। করোনাকালীন সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই শিরোনাম হতে দেখা গেছে চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের নানান অসুবিধা এমন কি বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মতো ঘটনা। আবার এই দুঃসময়ে নিজের জীবন বাজি রেখে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। তেমনই একজন মেডিসিন ও হৃদরোগে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. নাজেম আল কোরেশী রাফাত।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে করোনাকালীন সময়ে অনেক চিকিৎসক রোগী দেখা বন্ধ করে দিলেও মানবিক এই চিকিৎসক সেবার ব্রত নিয়ে ছুটে চলেছেন সবসময়, মানুষকে দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা।

মানবিক চিকিৎসক রাফাত শ্রীমঙ্গল শহরের খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় একজন। শহরস্থ হেলথ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং শহরের রুপসপুরস্থ নিজ বাসা কোরেশী ভিলা থেকে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। করোনাকালে একদিনের জন্যও বন্ধ রাখেননি তার চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। রোগীদের জন্য সবসময় খোলা রেখেছেন তার চেম্বার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোগী দেখে চলেছেন নিয়মিত।

জানা যায়, তার পেশাগত জীবনে তিনি গরিব ও অসহায় রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছেন। নিজ চেম্বারে একটা বড় কাগজে লিখে রেখেছেন চিকিৎসার ফি দিতে কষ্ট হলে ফি দেওয়া লাগবে না।

১৯৯০ সালে শ্রীমঙ্গলের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন ডা. মো. নাজেম আল কোরশী রাফাত। বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম কোরেশী জ্ঞানের আলো ছড়ানো ও মানুষ গড়ার ধ্যানে পার করে দিয়েছেন জীবনের দীর্ঘ ৩৮ বছর। ৭১ বছর বয়সে শিক্ষকতা পেশার অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে অবসরে আছেন তিনি।

২০১৫ সালে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে চিকিৎসাসেবা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে  নিজেকে সম্পৃক্ত করেন ডা. রাফাত। বর্তমানে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠনকে। জাতীয় মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মৌলভীবাজার জেলা শাখার স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখা সহ-সভাপতির সম্মানজনক পদে দীর্ঘদিন থেকে দ্বায়িত্বপালন করছেন তিনি। SAVE (Sreemangal Association of Voluntary Efforts) নামের আরেকটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ-সভাপতির দ্বায়িত্বও পালন করছেন।

বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পারিবারিকভাবে গড়ে তুলেছেন 'কোরেশী ফাউন্ডেশন' নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন আর এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ডা. রাফাত নিজেই। সেবা প্রদানের স্বপ্নে লালিত 'কোরেশী ফাউন্ডেশন' এর বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম কার্যক্রম হচ্ছে ৩ বছর ধরে চলমান 'ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক।। আর এই ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক ২০১৮ সাল থেকে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবারে খেটে খাওয়া অসহায়, দুস্থ, দিনমজুর মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছে।

ডা. রাফাতের কাছে মায়ের চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মোশারফ হোসেন বলেন, আমার মায়ের ডায়াবেটিস। আমরা দীর্ঘদিন থেকে একজন ডাক্তারকে দেখাচ্ছিলাম। করোনার কারণে ডাক্তার হঠাৎ করে রোগী দেখা বন্ধ করে দিলে মায়ের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে শুভাকাঙ্ক্ষী একজনের মাধ্যমে ডা. রাফাত সাহেবের কথা জানতে পেরে মায়ের ট্রিটমেন্ট করাতে আসি। ডা. রাফাত অত্যন্ত ভদ্র ও আন্তরিক মানুষ। তার কথায় রোগমুক্তির সাহস খুঁজে পাওয়া যায়।

ডা. মো. নাজেম আল কোরেশী রাফাত বলেন, চিকিৎসা পেশাটা হচ্ছে একটা মহান পেশা। এই পেশায় নিজেকে যুক্ত করার পর থেকে রোগীর সেবা ছাড়া অন্য কিছু কখনোই ভাবিনি। আমি সবসময় মনে করি আগে রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা জরুরি। আর রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেই আমার মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। আমি এতে তৃপ্তি পাই। সেবার মতো পেশায় যুক্ত হয়েছি বলেই সেবা দেওয়ার ইচ্ছা থেকে নিয়মিত রোগী দেখে যাচ্ছি।

করোনাকালীন সময়ে নিজের নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক ডাক্তার তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছে, কিন্তু আপনি কেন খোলা রেখেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দান থেকে কখনো কোনো সৈনিক নিজের নিরাপত্তার ভয়ে পালিয়ে আসেনি। আমি মনে করি জাতির এই দুঃসময়ে আমাদের মানুষের পাশে থাকা উচিৎ। তবে অবশ্যই ডাক্তারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোগী দেখার পরামর্শ দিতে চাই। কারণ কোনো ডাক্তারের দেহে যদি করোনা বা করোনার উপসর্গ থাকে, তাহলে রোগীদেরও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।

হেলথ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক রেজাউল করিম সানি জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে আমরা পরিচালকরাসহ আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডা. মো. নাজেম আল কোরশী রাফাত ভাইয়ের কাছ থেকে সাহস ও উৎসাহ পেয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। করোনাকালীন সময়ে ডা. নাজেম আল কোরশী রাফাত ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে আমরা সবাই নিজেদের গর্বিত মনে করছি।

স্থানীয় প্রাক্তন চিকিৎসকরা বলছেন, ডা. মো. নাজেম আল কোরেশী রাফাত ডাক্তার হিসেবে নিজের বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে করোনাকালে মানুষকে সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার ও গর্বের। আমরা মনে করি এই প্রজন্মের চিকিৎসকরা এটা দেখে অনুপ্রাণিত হবে। তিনি সত্যিই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।


জিকে/আরআর-০৫