ফটকে তালা দিয়ে রাস্তা বন্ধ, ভোগান্তিতে দশ গ্রামের মানুষ

কাজী গোলাম কিবরিয়া, শ্রীমঙ্গল


মে ২৭, ২০২১
১০:৩৫ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৭, ২০২১
১০:৩৫ অপরাহ্ন



ফটকে তালা দিয়ে রাস্তা বন্ধ, ভোগান্তিতে দশ গ্রামের মানুষ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের একটি চা-বাগানের রাস্তার ফটক বন্ধ করে দেওয়ার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ১০ থেকে ১২টি গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে এখন চা উৎপাদনের মৌসুম হওয়ায় বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ওই এলাকার বাগান মালিকরা। ওই রাস্তা দিয়ে এলাকার বাগান মালিকরা আনারস, লেবু, কাঁঠাল, কলা, নাগামরিচ ইত্যাদি ফল-ফসল নিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু হঠাৎ করে নন্দরানী চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ফটকে তালা লাগিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব মানুষ।

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, তারা তাদের জন্মের পর থেকে এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে আসছেন। কোনোদিন বাধার সম্মুখীন হননি। এখন হঠাৎ করে কেন চা-বাগান কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নন্দরানী চা-বাগানটি পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়। এর দুইপাশে রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা। ফটকের একদিকে আছে জঙ্গলবাড়ি, হোসনাবাদ, বিলাস ছড়া, হোসনাবাদ ৬ নম্বর, ১১ নম্বর ও ১২ নম্বর খাসিয়াপুঞ্জি, হাফরা ছড়া ইত্যাদি। অপর পাশে রয়েছে মহাজিরাবাদ, বিষামনী, বালিশিরা খাসিয়াপুঞ্জি, রাধানগর ডলোবাড়ি, বেগুনবাড়ি, দিলবর নগর ইত্যাদি গ্রাম। পাহাড়ি এসব এলাকায় লেবু, আনারস, নাগামরিচ, কাঁঠাল, পান ইত্যাদি চাষাবাদ হয়ে থাকে। তিন বছর আগেও এখানে কোনো ফটক ছিল না। প্রায় আড়াই বছর আগে এখানে নন্দরানী চা-বাগান কর্তৃপক্ষ একটি ফটক নির্মাণ করে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ নন্দরানী বাগানের এই ফটক দিয়ে চলাচল করেন। 

লেবু ও আনারস বাগানের মালিক আবু সাঈদ ও আব্দুল হান্নান বলেন, চা-বাগান কর্তৃপক্ষ রাস্তার ফটকে তালা লাগিয়ে যাতায়াতে বাধা দেওয়ার কারণে বাগান মালিকদের বাগানে যাওয়া-আসা এবং বাগান থেকে ফল-ফসল কেটে বাজারে নেওয়া নিয়ে বিরাট সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে তারা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

এদিকে বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, রাস্তাটি তাদের নিজস্ব। তাই তারা এ রাস্তা দিয়ে সপ্তাহে ৫ দিন যাতায়াত করতে দেবেন। সপ্তাহের বুধবার ও সোমবার দুইদিন রাস্তাটি বন্ধ রাখবে তারা। রাস্তাটি দুইদিন কেন বন্ধ রাখা হবে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, যে স্থানে তালা লাগিয়ে ফটক বন্ধ করা হয়েছে, সেই স্থান কমলগঞ্জ উপজেলায় পড়েছে। কিন্তু ফটকের দুইপাশের ৮/১০টি গ্রামের মানুষজন শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাসিন্দা। বিশেষ করে এসব এলাকার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটিমাত্র উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে। সেটির অবস্থান মোহাজেরাবাদ গ্রামে। ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এই ফটক দিয়ে চলাফেরা করে। স্কুলে যাতায়াতের জন্য এটিই একমাত্র রাস্তা।

নন্দরানী চা-বাগানের হেড ক্লার্ক পংকজ দাস বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সপ্তাহে দুইদিন এ রাস্তায় চলাচল করা যাবে না। বাকি ৫ দিন সবাই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এটি বাগানের নিজস্ব রাস্তা। কর্তৃপক্ষের কথামতোই চলতে হবে। আমরা বাগানে চাকরি করি। আমাদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, আমরা সেটা মেনে চলি।

এ বিষয়ে জানতে নন্দরানী চা-বাগানের সহকারী ম্যানেজার মোস্তাক আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা যাবে না। যেহেতু এই রাস্তা দিয়ে জরুরি কৃষিপণ্য লেবু, আনারস ইত্যাদি নিয়ে আসা হয়, সেহেতু বাগান কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এসব এলাকার বাসিন্দারা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে পারব।


জিকে/আরআর-০১