অবশেষে দখলমুক্ত হলো বড়লেখার পানজুম

বড়লেখা প্রতিনিধি


জুন ০৫, ২০২১
০১:৪৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৫, ২০২১
০২:০২ পূর্বাহ্ন



অবশেষে দখলমুক্ত হলো বড়লেখার পানজুম
খাসিয়াদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বনাখলাপুঞ্জির পানজুম দখল করে নির্মিত তিনটি ঘর অবশেষে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

শুক্রবার (৪ জুন) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ঘরগুলো উচ্ছেদ করা হয়। ফলে প্রায় এক সপ্তাহ পর পানজুমটি দখলমুক্ত হলো। এতে খাসিয়াদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। ঘর উচ্ছেদের পর খাসিয়া ও চা-বাগানের কাছে জুমের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।

এসময় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর, বড়লেখা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূসরাত লায়লা নীরা, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

থানা পুলিশ, পুঞ্জির বাসিন্দা ও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা চাষের জন্য ১ হাজার ৯৬৪ দশমিক ৫০ একর টিলাভূমি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়। পরে তারা ২৭২ একর জমি খাসিয়াদের কাছে উপ-ইজারা দেয়।

২০০৭ সালে খাসিয়ারা ওই জমিতে বনাখলাপুঞ্জি নামে বসতি স্থাপন করে। এরপর সেখানে পান চাষ শুরু করেন। পুঞ্জিতে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি খাসিয়া পরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য থাকে। প্রতিটি পরিবারের আলাদা পানের জুম আছে।

গত ২৮ মে সকালে বনাখলাপুঞ্জির পানজুম দখল করে স্থানীয় কয়েকজন কয়েকজন ব্যক্তি খাসিয়াদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর জুম দখল করে সেখানে তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করে। একসপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে খাসিয়াদের তারা জুমে প্রবেশ করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়।

এই ঘটনায় গত ৩০ মে পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন। পানজুম দখল ও পানগাছ কাটার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আদিবাসী নেতারা দ্রুত জুম দখলমুক্ত করে খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

জুম দখল নিয়ে গতকাল শুক্রবার সিলেট মিররে ‘দখলমুক্ত হয়নি পানজুম বিপাকে খাসিয়ারা’ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া এই ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দখলের সাতদিন পর শুক্রবার (০৪ জুন) উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে জুমে নির্মিত তিনটি ঘর উচ্ছেদের মাধ্যমে জুমটি দখলমুক্ত করা হয়।  

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, ‘গত ২৮ মে পানজুম দখলের ঘটনায় খাসিয়া ও বাগান কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি মামলা করেন। জুম দখলের মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে জুমের জায়গা বাগান ও খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে এ জন্য নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘শুক্রবার বনাখলাপানপুঞ্জির পানজুম দখলমুক্ত করা হয়েছে। জায়গাটি দুর্গম। স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারী কিছুদিন জুমের জায়গা দখল করে রেখেছিল। উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে অবৈধ দখলকারিদের সমূলে উচ্ছেদ করা হয়। এরপর খাসিয়াদের তাদের পানজুমের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এতে তারা খুশি হয়েছেন। খাসিয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে ও তাদের অধিকার রক্ষায় বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

এজেএল/আরসি-০৪