খাসিপুঞ্জির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেন পরিবেশমন্ত্রী

বড়লেখা প্রতিনিধি


জুন ১৩, ২০২১
০৭:২৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৩, ২০২১
০৭:২৫ অপরাহ্ন



খাসিপুঞ্জির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেন পরিবেশমন্ত্রী

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১৯টি খাসিপুঞ্জির প্রধানরা (মান্ত্রী) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি'র সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় তারা মন্ত্রীর কাছে দীর্ঘদিনের ভূমি ও বিদ্যুতের সমস্যা, বিশুদ্ধ পানির সংকট, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুঞ্জি এলাকার বিদ্যালয় মেরামতের মতো নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তা সমাধানের দাবি জানান। পরিবেশমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে সমস্যাগুলো সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শনিবার (১২ জুন) রাত ৮টা থেকে ১০টায় পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।

সভায় আগারপুঞ্জির পুঞ্জি প্রধান (মান্ত্রী) সুখমন আমসে বলেন, গত ২৯ মে আমাদের পানজুমে ঢুকে দুর্বৃত্তরা সহস্রাধিক পান গাছ কেটে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত দুষ্কৃতিকারীদের কাউকে শনাক্ত করা হয়নি। আমরা সবসময় উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকি। সরকার যদি বাগানকে বন্দোবস্ত দিতে পারে, আমাদেরকে কেন দেবে না? আমরা আমাদের ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি করছি। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন দাবি করছি।

বনাখালাপুঞ্জির পুঞ্জি প্রধান (মান্ত্রী) নরা ধার বলেন, গত ২৮ মে স্থানীয় লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের পুঞ্জির জুম দখল করে। এরপর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। জুম দখল করে সেখানে তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ কর। পরিবেশমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত ৪ জুন উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে জুমগুলো উদ্ধার করে দেয়। আমরা মন্ত্রী ও প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ। যদিও আমাদের মাঝে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দখলদাররা পান জুম দখলের পর পান তুলে নিয়ে গেছে, বেশিরভাগ নষ্ট করে দিয়েছে। এমনকি পান জুমের কাঁটাতার কেটে ফেলেছে। দখলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি পরিবার অসহায়ত্বে দিন কাটছে। 

সব শুনে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন খাসিয়াদের বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। আপনাদের সমস্যার কথা শুনে আমি ইউএনও, এসপি ও ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি দখলদারদের উচ্ছেদ করে জায়গাগুলো ফিরিয়ে দিতে। তারা যৌথ অভিযান চালিয়ে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে আপনাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যাতে না ঘটে, সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বাগান সরকারের কাছ থেকে জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে খাসিয়াদের জন্য কিছু জায়গা বন্দোবস্ত দিয়েছে। আপনাদেরকে জায়গাগুলো বন্দোবস্ত দিতে হলে বাগানের কাছে দেওয়া বন্দোবস্ত বাতিল করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যে পুঞ্জিগুলোতে সিঁড়ি পাননি, সেসব পুঞ্জিতে সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হবে। যাদের পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ এখনও পৌঁছেনি, তাদের বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে, পর্যায়ক্রমে সবগুলো রাস্তা পাকাকরণ করে দেওয়া হবে। ভূমির সমস্যা সমাধানে আমি ভূমি কমিশনার ও ইউএনওকে নির্দেশ দিচ্ছি। তারা আপনাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সুরক্ষা, অধিকার রক্ষা ও নিশ্চিতকরণে প্রশাসন সবসময় পাশে আছে। আপনাদের জন্য প্রশাসনের দরজা সবসময় খোলা থাকবে। যে কোনো ধরনের সমস্যায় আমাকে কল দেবেন। আমি আপনাদের সহযোগিতা করব।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গমেজ (ওএমআই) ও কুলাউড়া লক্ষীপুর মিশনের পুরোহিত ফাদার সুমির গমেজ।

এ সময় ডিমাই মিশনের প্রধান শিক্ষক ফাদার দিপক কস্তা, আগারপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) সুখমন আমসে, বনাখালাপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার, সাংবাদিক লিটন শরীফ ও মাইকেল নংরুম, মাধবকুণ্ডপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) ওয়ানবর এলগিরি, সাত নম্বর পুঞ্জির সাবেক মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) প্রধান এলিয়াস বারৈ, সেক্রেটারি পাইলট মারলিয়া, গান্দাই পুঞ্জির প্রধান রাজেস পঃস্না ছাড়াও বিভিন্ন খাসি পুঞ্জির প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।


এজে/আরআর-০৩